Home / নামের ইতিহাস ও কিংবদন্তী / সিলেট জেলার বিভিন্ন স্থানের নামকরণ ইতিহাস

সিলেট জেলার বিভিন্ন স্থানের নামকরণ ইতিহাস

সিলেট জেলার নামকরণ ইতিহাসঃ

নানা মত, মিথ আর উপকথায় পরিপূর্ণ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেটের নামকরণের ইতিহাস।  এগুলোর কোনোটি হয়তো ধর্মীয় ইতিহাস থেকে উঠে আসা, কোনোটি আবার সম্পর্কিত স্থানীয় লোককাহিনীর সঙ্গে।

সবচেয়ে প্রচলিত ধারণাটি হলো, শিলা মানে পাথর। আর পাথরের প্রাচুর্যের কারণেই এ এলাকার নাম সিলেট। এ ধারণার পালে আর একটু হাওয়া দিয়ে বলা হয়ে থাকে, সিলেট শব্দের অনুসর্গ সিল মানে শীল বা পাথর আর উপসর্গ হেট মানে হাট বা বাজার। প্রাচীনকাল থেকে এ জেলায় পাথর ও হাটের আধিক্য থাকায় শব্দ দু’টি মিলে সিলেট নামের উৎপত্তি।  হিন্দু মিথ বলছে, কন্যা শীলাদেবীর নামে হাট স্থাপন করেন প্রাচীন গৌড়ের রাজা গুহক। তখন শিলার নামের সঙ্গে হাট জুড়ে নাম হয় শীলাহাট। কালক্রমে শিলাহাট থেকে সিলট, সবশেষে সিলেট নামটি টিকে যায়।

পুরাণে বলা হচ্ছে, বিষ্ণু চক্রে খণ্ডিত সতীর শবদেহের যে ৫১টি খণ্ড উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানে পতিত হয় তার মধ্যে দু’টি পড়ে সিলেটে। যেহেতু সতীর অপর নাম শ্রী। তাই এই শ্রী এর সঙ্গে হড্ড (হাড়) জুড়ে নাম হয় শ্রীহট্ট। যা পরে সিলেট নামে পরিচিতি পায়। বিষয়টাকে এভাবেও বলা যায়, শ্রী অর্থ প্রাচুর্য বা সৌন্দর্য, হস্ত অর্থ হাত। যেখানে শ্রী এর হস্ত পাওয়া গিয়েছিল তাই শ্রীহস্ত- যা কালের বিবর্তনে শ্রীহট্ট নাম ধারণ করে।

তবে হযরত শাহ্জালালের ‘সিল হট যাহ্’ আদেশ থেকে সিলেট নামের উৎপত্তি বলেও ধারণা প্রচলিত আছে। সিলেটে আসার সময় পথে অনেক বড় বড় পাথর পড়ায় শাহজালাল আদেশ করেন-সিল হট যাহ (পাথর সরে যা)। ওই আদেশে পাথর খণ্ড সরে গেলে সিলহট নামটির জন্ম হয় যা পরে সিলেট নামে পরিচিতি পায়।

শ্রীহট্ট শব্দের আর এক নাম সমৃদ্ধ হাট। এই সমৃদ্ধ হাট বহু আগে থেকেই ছিলো বর্ধিষ্ণু বাণিজ্য কেন্দ্র।

প্রাচীন যুগে শ্রীহট্ট নামে প্রতিষ্ঠিত পৃথক রাষ্ট্র কিছুকালের জন্য ‘হরিকেল’ নামেও পরিচিত ছিল। সপ্তম শতাব্দীতে চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং ভারত ভ্রমণের সময় এ এলাকাকে ‘শিলিচট্রল’ বলে উল্লেখ করেন।ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে সিলেট এলাকায় মানুষের বসবাস বাড়তে থাকে। ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে গৌড় গোবিন্দকে পরাজিত করে হজরত শাহ্ জালাল সিলেট অধিকার করলে সিলেট চলে আসে মুসলমান সুলতানদের অধীনে।

সুলতানী আমলে সিলেটের নাম ছিল জালালাবাদ। মহারাজা শ্রীচন্দ্রের পশ্চিমভাগ তাম্রলিপি থেকে জানা যায়, দশম শতাব্দীতে বাংলায় চন্দ্র বংশের রাজত্বকালে তিনি এ জেলা জয় করেছিলেন।  তার অধীনে শ্রীহট্টমণ্ডল নামে প্রশাসনিক বিভাগ গড়ে ওঠে যা সামন্ত রাজাদের হাতে শাসিত হতো।এই শ্রীহট্টমণ্ডল থেকেই কালক্রমে শ্রীহট্ট বা সিলহেট, সবশেষে সিলেট নামের উৎপত্তি। একাদশ শতাব্দীতে মুসলিম পরিব্রাজক আল্ বেরুনীর কিতাবুল হিন্দ গ্রন্থে সিলেটকে ‘সীলাহেত’ বলে উল্লেখ করা হয়। ইংরেজ আমলেও কাগজ-পত্রে সিলহেট নামটির ব্যবহার ছিলো। তবে উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে কাছাড় ইংরেজ অধিকারে এলে সেখানকার সদর স্টেশন শিলচর এর সঙ্গে পার্থক্য দেখাতে সিলহেট নামটিকে বেশি করে প্রচার করা শুরু হয়।

সিলেট জেলার উপজেলা সমুহঃ

বালাগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, বিশ্বনাথ, কোম্পানীগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, সিলেট সদর, জকিগঞ্জ, দক্ষিণ সুরমা, ওসমানী নগর।

বালাগঞ্জ উপজেলার নামকরণ ইতিহাসঃ

এ উপজেলার ‘বালাগঞ্জ’ নামকরন নিয়ে গবেষকদের মধ্যে বিভিন্ন মত বিদ্যমান রয়েছে। কারো মতে এর আদি নাম ছিল ‘কুশিয়ারকূল’যা এখানকার প্রধান নদী কুশিয়ারা’র পারে উৎপাদিত ‘কুশিয়ার’ (আঁখ) থেকে আগত এবং এ নদীটিও সেজন্য কুশিয়ারা নামে পরিচিতি লাভ করে। পরবর্তীতে এখানে গড়ে ওঠা মদন মোহন জিউ আশ্রমের প্রভাবে নাম পরিবর্তীত হয়ে মদনগঞ্জএবং তা থেকে বালাগঞ্জ নাম ধারণ করে। কথিত আছে, মদন মোহন জিউ আশ্রমের সেবায়িতগণ হাতে প্রচুর পরিমাণে ‘বালা’(মহিলাদের হাতে পরার বিশেষ ধরণের চুড়ির মত অলঙ্কার যা স্বর্ণ এবং/অথবা ব্রোঞ্জ এর তৈরী) পরতেন এবং এর ফলে এখানে বিপুল পরিমাণে ‘বালা’ কেনা-বেচা হত  বলেই  বালাগঞ্জ  নামকরন হয়। অনেকে মনে করেন গুরুত্বপূর্ণ নৌবন্দর  হিসেবে এখানে ‘বালা বালা’  (ভাল ভাল – এর স্থানীয় রূপ) জিনিষপত্র পাওয়া যেত বলে এর নাম বালাগঞ্জ হয়েছে।

বিয়ানীবাজার উপজেলার নামকরণ ইতিহাসঃ

বিয়ানীবাজার নামের নেপথ্যে এক জনশ্রুতি রয়েছে।আজকের এই পৌরসদর তখন ছিল গহীন জঙ্গল ও টিলা বেষ্টিত ভূমি। সিলেটের প্রথম রায় বাহাদুর হরেকৃষ্ণ রায় চৌধুরীর পুত্র কৃষ্ণ কিশোর পাল চৌধুরী এই জায়গায় একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।এই জায়গায় প্রতিদিন বিহানবেলা (সকালবেলা) হাট বসত। হিংস্র জন্তুদের ভয়ে লোকজন কেনাকাটা সেরে দিনের আলোয় যার যার আস্তানায় ফিরে যেতো।  বিহানবেলা  এই  হাট  বসতো  বলে  এই স্থানের  নামকরণ করা হয় বিহানীবাজার অর্থ্যাৎ বিয়ানীবাজার।

বিশ্বনাথ উপজেলার নামকরণ ইতিহাসঃ

ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ক্রমবিকাশ পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, এখানে মুসলমান ও হিন্দু জমিদারদের আবির্ভাব ঘটেছিল। ১৭৯৩ সালে লর্ড কর্নওয়ালিসের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সময় বর্তমান বিশ্বনাথ বাজার ও অন্যান্য  গুরুত্বপূর্ণ  স্থান  সমূহের জমিদারী পান  বাবুরাম জীবন রায় ও তাঁর  পুত্র বিশ্বনাথ রায় চৌধুরী।  কালক্রমে এ এলাকায় প্রাথমিকভাবে বিশ্বনাথ বাজারসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান  গড়ে উঠেছিল  বলে সংশ্লিষ্ট  জমিদার বিশ্বনাথ রায় চৌধুরীর  নামানুসারে ‘‘বিশ্বনাথ’ নামকরণ হয়েছিল।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নামকরণ ইতিহাসঃ

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলাটি ১৯৮২ সালের ১১ নভেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয়।  উপজেলার নামকরণ হয় থানার নামে।  থানাটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৬ সনে।  তখন  কোম্পানীগঞ্জ থানাটি  সুনামগঞ্জ  জেলার  ছাতক  থানায় ইসলামপুর ইউনিয়নের অংশ  সিলেট  জেলার সদর থানাধিন  জালালাবাদ  ইউনিয়নের অংশ  এবং  একই  জেলার  গোয়াইনঘাট  থানার  রুস্তুমপুর  ও তোয়াকুল  ইউনিয়নের  অংশ বিশেষ  নিয়ে  প্রতিষ্ঠিত  হয়।  থানা  প্রতিষ্ঠার  মূল কারণ হিসাবে স্থানীয় তথ্যানুসন্ধানে জানা যায় যে, ১৯৭৫ সালে বর্তমান উপজেলায় কোন সড়ক যোগাযোগ ছিলনা কাজেই শুষ্কমৌসুমে পায়ে হাটা ব্যতিত এ অঞ্চলে যোগাযোগের কোন ব্যবস্থা ছিল না।  শুধুমাত্র  বর্ষাকলে  নৌপথে নৌকায় যোগাযোগ করা যেত।  সংগত  কারণে  এ  অঞ্চলের  আইন  শৃংখলা  নিয়ন্ত্রণ  ছিল  প্রায় অসম্ভব কাজ। মূলত এ চাহিদা থেকেই ১৯৭৬ সালে থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। এ উপজেলাধীন ধলাই ও পিয়াইন নদী হয়ে ছাতকের সংলগ্ন সুরমা নদী দিয়ে ইষ্ট-ইন্ডিয়া  কোম্পানীর  লোকজন ব্যবসা  করত  বলে  লোক মুখে জানা  যায়।  পরবর্তীতে ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানীর  অফিস থাকার  কারণে  সংশ্লিষ্ট জায়গাটির  নামানুসারে  কোম্পানীগঞ্জ গ্রাম প্রতিষ্ঠিত  হয়।  তবে উক্ত গ্রামের নামে কোম্পানীগঞ্জথানার নাম হয় নি।  বর্তমানে  কোম্পানীগঞ্জ  থানাটি যে জায়গায় প্রতিষ্ঠিত সে জায়গাটি বুড়দেও গ্রামের অর্ন্তগত।  থানা ভবনের সামনে ধলাই  নদীর একাংশ।  নদী পূর্বে আরও দূরে ছিল এবং বর্তমানে নদীর অংশে ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানীর একটি বাংলো ছিল।  উক্ত  কোম্পানীর বাংলোর নামেই থানার নাম কোম্পানীগঞ্জ হয়েছিল বলে লোকমুখে জানা যায়।  কোম্পানীগঞ্জ  থানার অংশ  এবং নামানুসারে  বর্তমান কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

ফেঞ্চুগঞ্জউপজেলার নামকরণ ইতিহাসঃ

জনশ্রুতি আছে, সতের শতকের গোড়ার দিকে ফেঞ্চুরাম বুড্ডা মতান্তরে ফেঁচুরাম নামে এক জেলে কুশিয়ারা নদীর পাড়ে চিড়া, মুড়ি, গুড়, টিকি, তামাক ইত্যাদি বিক্রির জন্য সাজিয়ে বসতো। সময়ের পালা বদলে আরো দোকানপাট গড়ে উঠে কালক্রমে তা বর্তমান আকার ধারণ করে। ফেঞ্চুরামের নামানুসারে প্রথমে ফেঞ্চুয়াগঞ্জ বা ফেঁচুয়াগঞ্জ থেকে বর্তমান ফেঞ্চুগঞ্জ নামকরণ হয়।

গোলাপগঞ্জ উপজেলার নামকরণ ইতিহাসঃ

গোলাপগঞ্জ ও তৎসংলগ্ন বিভিন্ন অঞ্চলের নামকরেণর কোন প্রামাণ্য দলিল অদ্যাবধি পাওয়া যায়নি। তা জনশ্রুতি ও কিংবদন্তীর উপর ভিত্তি করে গোলাপগঞ্জ উপজেলার নামকরণের ইতিহাস তুলে ধরা হলো মুগল শাসনামলে সম্রাট  মুহম্মদ শাহ (১৭১৯-৪৮)  এর রাজত্বকালে আনুমানিক ১৭৪০  সালে অল্পকালের জন্য সিলেটের দেওয়ান (রাজস্ব কর্মকর্তা) নিযুক্ত হয়ে মুর্শিদাবাদ থেকে সিলেট আসেন গোলাব রাম (মতান্তরে  গোলাব রায়)। এ সময় সিলেট অঞ্চলে ফৌজদার ছিলেন সমসের খান এবং সুবা বাংলার শাসনকর্তা ছিলেন সুজা  উদ্দিন খান। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই এই ধর্মপ্রাণ দেওয়ান গোলাপগঞ্জের ঢাকাদক্ষিনে শ্রী চৈতন্যের পিতৃভূমি সম্পর্কে অবগত হন। দেওয়ানের নির্দেশে সিলেট থেকে ঢাকাদক্ষিনপর্যন্ত সড়ক ও সেতু নির্মিত হয়।  এ সড়ক পথে ঢাকাদক্ষিণ এসে দেওয়ান শ্রী চৈতন্যের পিতৃভূমিতে এক মন্দির স্থাপন করেন, এর সমনে এক দীঘি খনন করান ।  হেতিমগঞ্জ থেকে ঢাকা দক্ষিণগামী  সড়কিট আজো  দেওয়ান  সড়ক  নামে পরিচিত । এ  সড়কে  দেওয়ানের  পুল নামে একটি প্রাচীন কালভার্ট আজ ও বর্তমান।  ধারনা করা হয় এই দেওয়ানের নামানুসারেই সুরমা নদী তীরে গোলাবগঞ্জ নামে এক বাজার গড়ে ওঠে যা কালক্রমে পরিবর্তিত হয়ে গোলাবগঞ্জ নাম ধারন করে।  গোলাবগঞ্জের প্রাচীন দলিল ও রেকর্ডপত্রে গোলাবগঞ্জ নামটি এরই সাক্ষ্য বহন করে।

গোয়াইনঘাট উপজেলার নামকরণ ইতিহাসঃ

জনশ্রুতি অনুসারে, জানা যায়, একসময় গোয়াইন নদীর তীরে একটি ফেরী স্টেশন (ঘাট) ছিল। স্থানীয় লোকজন এই স্টেশনকে গোয়াইনঘাট নামে অভিহিত করতো, যা থেকে একসময় এই জনপদের নাম হয় গোয়াইনঘাট।

জৈন্তাপুরউপজেলার নামকরণ ইতিহাসঃ

প্রাচীনকালে জৈন্তিয়া একটি স্বাধীন ও সমৃদ্ধশালী রাজ্য ছিল। জাইন্তিয়া শব্দ থেকে জৈন্তিয়া শব্দের উৎপত্তি। এ সম্পর্কে বিভিন্ন পন্ডিত নানা মত দিয়েছেন। প্রত্নতাত্বিক রাজমোহন নাথের মতে, যে জাইন্তিয়ার লোকেরা আদিতে টিন বংশের ছিলেন। চীন দেশ থেকে এসেছিল বলে তাদের সিটিং বলা হয়। সিন্টিং হতে জাইন্তিয়া শব্দ এসেছে।  জাইন্তিয়া আদিবাসীগণ ঝুহঃবহম নামেও পরিচিত।  ড. সুনীত কুমার চ্যাটার্জির মতে সিন্টেং শব্দ হতে জাইন্টেং শব্দটি উৎপত্তি লাভ করেছে।  এবং সংস্কৃতকরণ বা আর্যকৃত  হয়ে জৈন্তিয়া বা জাইন্তিয়া হয়েছে। অনেকের মতেই জয়ন্তিয়া বা জাইন্তিয়া (খাসিয়া উচ্চারণ) শব্দটি সিন্টেং শব্দ হতে উৎপত্তি লাভ করেছে।  টেং নামক আদি রাজমাতা হতেই জাইন্তিয়ার প্রাচীন রাজবংশের উৎপত্তি হয়েছিল।  সম্ভবত জাইন্তিয়া শব্দটি খাসিয়াদের Youngteng(ইয়ংটেং)  বা  Youngtrai (ইয়ংট্রাই) শব্দ  হতে  এসেছে।  খাসিয়া  ভাষায়  ইয়ং  অর্থ  ‘নিজ’  বা  ‘আপন ’ এবং  টেং হলো কোন আদিমাতার নাম বিশেষ।  Youngteng এর অর্থ হলো, ‘‘টেং- এর দেশ’’ ব আপন ভূমি।  আদি জাইন্তিয়া ‘‘ইয়ান্তা’’ নামেই পরিচিত ছিল। ইয়ান্ত শব্দটি (ইয়ংট্রাই) শব্দ হতে উৎপত্তি লাভ করতে পারে।  ইয়াংট্রাই অর্থ স্বদেশ বা আদিভূমি বা নিজ ভূমি।  মধ্যযুগ পর্যন্ত আ-খাসিয়াগণ জয়ন্তিয়াপুরের রাজধানী ‘জয়ন্তিয়াপুর  কে’  ‘নিজ পাট’  বলে ডাকত। তাছাড়া সিন্টেং জাইন্তিয়ার আদিবাসী ‘‘পার ’’  নামে অভিহিত হতে বেশী স্বাচ্ছন্দ বোধ করে।  পার কথাটির অর্থ হলো নিজ।  অহংকার করে নিজেকে স্বদেশের উত্তরাধিকারী  বোঝাতে পার  শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।  পার এর অর্থবোধক শব্দ হলো আদি অধিবাসী। তাই বলা যায় যে খাসিয়াদের নিজ দেশ  বলতেই ইয়ান্তা  বা জাইন্তিয়া বা জয়ন্তিয়া শব্দটি ব্যবহৃত করা হয়েছে।  জাইন্তিয়ার আদিবাসীকে বোঝাতে পার – এর অ-আদিবাসীকে বুঝাতে ‘ডিখার’ বা রায়ত ব্যবহার করা হয়ে থাকে।  প্রাচীনকালে এই জাইন্তিয়াপুরের রাজধানীকে ‘জাইন্তিয়া পার বলা হতো।  জাইন্তিয়া পার হতেই জাইন্তিয়াপুর বা জয়ন্তিয়াপুর অতঃপর জৈন্তাপুর নামকরণ করা হয়েছে।

কানাইঘাট উপজেলার নামকরণ ইতিহাসঃ

জনশ্রুতি আছে যে, বর্তমান কানাইঘাট বাজারের তীরবর্তী সুরমা নদীর ঘাটে কানাই নামক একজন মাঝির নামানুসারে ‘কানাইরঘাট’ নামকরণ করা হয়। মতান্তরে কানাইঘাট উপজেলার মুলাগুল এলাকার কানাই চৌঃ নামক জৈন্তা   রাজ দরবারের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির নামানুসারে কানাইঘাট উপজেলার নামকরণ করা হয়েছে।

জকিগঞ্জ উপজেলার নামকরণ ইতিহাসঃ

১৯৪৭ সালের পূর্বে জকিগঞ্জ বলতে শুধূ বর্তমান জকিগঞ্জ বাজারই বুঝায়। জকিগঞ্জ নামে আলাদা কোন প্রশাসনিক ইউনিট ছিলনা। বর্তমান জকিগঞ্জ উপজেলা ভারতের করিমগঞ্জ সদর থানার অন্তরভূক্ত ছিল। ১৯৪৭ সনের দেশ বিভাগের সময় করিমগঞ্জ থানার যে সকল অঞ্চল তথকালিন পূর্ব পাকিস্তানের তথা বর্তমান বাংলাদেশ অংশে এসেছিল তাই জকিগঞ্জ থানা নামকরণ হয়েছিল।  পরবর্তিতে ০১/০৮/১৯৮৩ ইংরেজী  তারিখে জকিগঞ্জ থানা প্রশাসনিক উপজেলায় উন্নীত হয়।

দক্ষিণ সুরমা উপজেলার নামকরণ ইতিহাসঃ

2005 সালে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা গঠিত হয়। উপজেলার নামকরণ করা হয় সিলেট জেলার প্রধান নদী সুরমা’র নামানুসারে। এই নদীর নামকরণের একটি কাহিনী প্রচলিত আছে। সিলেটের মাটি সিলেটের মানুষ গ্রন্থের লেখক জনাব ফজলুর রহমান বর্ণিত কিংবদন্তিটি হচ্ছে, বারো শতকের রাজা ক্ষেত্রপাল বরাক নদী থেকে খাল কেটে নদীটির সৃষ্টি করেন এবং প্রিয়তমা স্ত্রী সুরমার নামে নাম রাখেন সুরমা। স্বীকার্য নদীটি যেমন সুন্দর, কাহিনীটির রানী সুরমা যে তেমনি পরমা সুন্দরী ছিলেন তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।

ওসমানীনগর উপজেলার নামকরণ ইতিহাসঃ

মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি বঙ্গবীর জেনারেল মোঃ আতাউল গণি ওসমানী’র পৈতৃক নিবাস এই উপজেলার দয়ামীর ইউনিয়নে অবস্থিত।  মহান ব্যক্তিত্বের  অধিকারী জেনারেল এম এ জি ওসমানী বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও পরে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশেষ অবদান রাখেন।  ইষ্ট পাকিস্তান রাইফেলস এর প্রতিষ্ঠাতা ও মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্রবাহিনী, মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক হিসেবে দেশকে শত্রুমুক্ত করে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।  এ মহান ব্যক্তির পৈত্রিক নিবাস এ উপজেলার ঐতিহ্য বহন করে এবং যা এই উপজেলার মানুষের গর্বের প্রতীক হিসেবে বাংলাদেশে প্রথম কোনো মুক্তিযুদ্ধার নামানুসারে ‘‘ওসমানীনগর’’ উপজেলার নামকরণ করা হয়।

About Sabuj Vumi Editor

Check Also

ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন স্থানের নামকরণ ইতিহাস

ঝিনাইদহ জেলার নামকরণ ইতিহাস: জনশ্রুতি আছে প্রাচীনকালে বর্তমান ঝিনাইদহের উত্তর পশ্চিম দিকে নবগঙ্গাঁ নদীর ধারে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Flag Counter