Home / নামের ইতিহাস ও কিংবদন্তী / রাজশাহী জেলার বিভিন্ন স্থানের নামকরণ ইতিহাস

রাজশাহী জেলার বিভিন্ন স্থানের নামকরণ ইতিহাস

রাজশাহী জেলার নামকরণ ইতিহাস:

রাজশাহী শব্দটি বিশ্লেষণ করলে দুটি ভিন্ন ভাষার একই অর্থবোধক দুটি শব্দের সংযোজন পরিলতি হয়। সংস্কৃত ‘রাজ’ ও ফারসি ‘শাহ’ এর বিশেষণ ‘শাহী’ শব্দযোগে ‘রাজশাহী’ শব্দের উদ্ভব, যার অর্থ একই অর্থাৎ রাজা বা রাজা-রাজকীয় বা বাদশাহ বা বাদশাহী। কেউ বলেন রাজা গণেশের সময় (১৪১৪-১৪১৮) রাজশাহী নামের উদ্ভব। তবে বাংলা ভাষায় আমরা একই অর্থের অনেক শব্দ দু-বার উচ্চারণ করে থাকি। যেমন শাক-সবজি, চালাক-চতুর, ভুল-ভ্রান্তি, ভুল-ত্র“টি, চাষ-আবাদ, জমি-জিরাত, ধার-দেনা, শিক্ষা-দীক্ষা, দীন-দুঃখী, ঘষা-মাজা, মান-সম্মান, দান-খয়রাত, পাহাড়-পর্বত, পাকা-পোক্ত, বিপদ-আপদ ইত্যাদি। ঠিক তেমনি করে অদ্ভুত ধরনের এই রাজশাহী শব্দের উদ্ভবও যে এভাবে ঘটে থাকতে পারে তা মোটেই উড়িয়ে দেয়া যায় না। এই নামকরণ নিয়ে অনেক কল্পকাহিনীও রয়েছে। সাধারণভাবে বলা হয় এই জেলায় বহু রাজা-জমিদারের বসবাস, এজন্য এ জেলার নাম হয়েছে রাজশাহী।
 জেলার নামকরণ নিয়ে আরো অনেক মতপার্থক্য রয়েছে। তবে ঐতিহাসিক অক্ষয় কুমার মৈত্রেয়র মতে রাজশাহী রাণী ভবানীর দেয়া নাম। অবশ্য মিঃ গ্রান্ট লিখেছেন যে, রাণী ভবানীর জমিদারীকেই রাজশাহী বলা হতো এবং এই চাকলার বন্দোবস্তের কালে রাজশাহী নামের উল্লেখ পাওয়া যায়। পদ্মার উত্তরাঞ্চল বিস্তীর্ন এলাকা নিয়ে পাবনা পেরিয়ে ঢাকা পর্যন্ত এমনকি নদীয়া, যশোর, বর্ধমান, বীরভূম নিয়ে এই এলাকা রাজশাহী চাকলা নামে অভিহিত হয়। অনুমান করা হয় ‘রামপুর’ এবং ‘বোয়ালিয়া’ নামক দু’টি গ্রামের সমন্বয়ে রাজশাহী শহর গ’ড়ে উঠেছিল। প্রাথমিক পর্যায়ে ‘রামপুর-বোয়ালিয়া’ নামে অভিহিত হলেও পরবর্তীকালে রাজশাহী নামটিই সর্ব সাধারণের নিকট সমধিক পরিচিতি লাভ করে।

গোদাগাড়ী উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:

গোদাগাড়ীর নামকরণ নিয়ে মতভেদ রয়েছে।

ঐতিহাসিক বিবরণ ১ :  ইতিবৃত্তের আকারে দেখতে গেলে জানা যায়, বৈষ্ণব ধর্মের প্রবর্তক শ্রী চৈতন্যদেব ধর্ম প্রচারের নিমিত্তে পূর্ববঙ্গ থেকে গঙ্গা বেয়ে প্রেমতলীতে স্নান করে গৌড় গমন করেন। পরে কিংবদন্তীর পর্যায়ে কথিত আছে প্রেমতলীর বৈষ্ণব ধর্মের আনুষ্ঠানিকতায় শ্রী চৈতন্যদেবের বৈষ্ণব প্রেমী ভাব শিষ্য শ্রী গোদা পরবর্তীতে বৈষ্ণব ধর্ম প্রচারে এ এলাকায় এসে মহাগুরুর স্নান তর্পনকে ভক্তি ভরে স্মরণ করে প্রত্যেক পূর্নিমা তিথিতে স্নানে যেতেন প্রেমতলীর তমাল তলার ঘাটে। যাবার পথে যানবাহন হিসেবে গরুর গাড়ী ব্যবহার করতেন। রাতের বেলায় গরুর গাড়ীর একটা আওয়াজ হতো। লোকে বলত কার গাড়ী যায়? উত্তর আসত ‘গোদার গাড়ী’।  জনশ্রুতি রয়েছে এই ‘গোদার গাড়ী’ থেকেই ‘গোদাগাড়ী’ নামের উৎপত্তি হয়েছে।

ঐতিহাসিক বিবরণ ২ :  আবার অনেকে মনে করেন এ জনপদের নাম গোদাগাড়ী নয় গোদাগারী। পুরনো দিনের মানচিত্রে এর সত্যতা মেলে। ‘গোদা’ শব্দের অর্থ হলো দেহ, তনু, কায়া এবং গারী শব্দের অর্থ রক্ষা করা। সুতরাং ‘গোদাগারী’ হচ্ছে নিরাপদ স্থান বা সুরক্ষিত স্থান। সুদীর্ঘ কাল হতে গোদাগারী নিরাপদ স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। নবাব আলিবর্দী খাঁর শাসনামলে বর্গীয় হাঙ্গামায় অষ্টাদশ শতকের প্রথমার্ধে (১৭৪১-১৭৪৪) যখন দেশবাসী শঙ্কিত, উৎকণ্ঠিত তখন বৃদ্ধ নবাব আলিবর্দী খাঁ ডেপুটি গভর্নর নোয়াযেশ মুহাম্মদ খানের নেতৃত্বে ও তত্ত্বাবধানে নবাব প্রাসাদের মূল্যবান দ্রব্য সামগ্রী, অর্থসম্পদ, সোনাদানাসহ পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার প্রয়োজনে এই গোদাগাড়ীতে স্থানান্তরিত করেছিলেন এবং গোদাগাড়ীর অদূরে বারুইপাড়া গ্রামে একটি শিবির ও কেল্লা নির্মাণ করে নিরাপত্তার সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।  লোকমুখে প্রচলিত হতে হতে গোদাগারী > গোদাগাড়ী হয়ে যায় (তাড়নজাত ধ্বনির বিবর্তন র > ড়)।

ঐতিহাসিক বিবরণ ৩ : জনশ্রুতি রয়েছে দূর অতীতে এখানে ‘গোদাবারি’ নামে একজন প্রভাবশালী ধোপা বসবাস করত। ধোপার স্ত্রী ছিলেন ব্যাভিচারিণী। গোদাবারি নামক এই ধোপা তারা স্ত্রীকে কাদায় গেড়ে (পুঁতে) ফেলেন। গোদা কর্তৃক তার স্ত্রীকে গেড়ে ফেলা থেকেই ‘গোদাগাড়ী’ নামকরণ হয়েছে ধারণা করা হয়।

তানোর উপজেলা নামকরণ ইতিহাস:

তানোর ’ শব্দটি তানর হতে উদ্ভুত । ‘ তানর ’ অর্থ তান-রহিত অর্থ্যাৎ জীবন-স্পন্দনহীন, নিস্প্রভ ও নিরানন্দ জনপদ। পুরাকালে গাছপালাহীন মরুপ্রায় এ অঞ্চলে জনপদ বলতে তেমন কিছুই ছিলনা । কালের আবর্তে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে আজকের এ জনপদ ‘তানোর ’ যা একটি শস্যশ্যামল খাদ্য ভান্ডার বিশেষ । 

মোহনপুর উপজেলা নামকরণ ইতিহাস:

এ উপজেলার নাম করণের বিষয়ে সুস্পষ্ট কোন তথ্য পাওয়া যায়না তবে ধারণা করা হয় মোহনপুর নামক একটি মৌজার নাম থেকেই উপজেলার নাম করণ করা হয়েছে।

 বাগমারা উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:

নামকরণ ইতিহাস ০১:  কথিত আছে এখানে এক সময় বন-জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল। বনে থাকতো ভয়ঙ্কর যত বাঘ-বাঘিনী। একদিন এক লোককে বাঘে আক্রমণ করলে তিনি তাঁর হাতে থাকা বদনা দিয়ে সেই বাঘ কে মেরে ফেলেন। ফলশ্রুতিতে এ উপজেলার নামকরণ হয় ‘‘বাগমারা’’।
নামকরণ ইতিহাস ০২:  বৃটিশ আমলে বিস্তীর্ণ বন-জঙ্গল কেটে জনবসতি গড়ে উঠায় উপজেলার নামকরণ করা হয় ‘‘বাগমারা’’।  

দুর্গাপুর উপজেলার নামকরণ ইতিহাস :

এ উপজেলার অধিকাংশই লোক বহু বছর পূর্বে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসে বসবাস করতে শুরু করেছে ফলে বিভিন্ন লোক কোন এলাকাকে ভিন্ন ভিন্ন নামে বলতে থাকে।  এর মধ্যে একটি হলো -অনেকে  মনে করেন, সোমেশ্বরী নদীর পূর্ব তীরে যে রাজবাড়ী স্থাপিত হয়েছিল সে স্থানটির নাম অধিষ্ঠাত্রী দেবী দশভূজার নামানুসারে দুর্গাপুর রাখা হয়। অন্য জনশ্রুতিটি হলো-দুর্গাপুর উপজেলাটিতে গারো হাজং এর বসবাস ছিল। যে স্থানে সূসং মহারাজের রাজবাড়ী সহাপিত হয় সে স্থানটি ছিল দুর্গা নামে গারো ব্যক্তির দখলে। দুর্গা গারো অনুরোধেই এ স্থানের নামকরণ করা হয় দুর্গাপুর।

বাংলাদেশের ৬৪ জেলা উপজেলা সহ বিভিন্ন স্থানের নামের ইতিহাস

বাঘা উপজেলার নামকরণ ইতিহাস :

বাঘা উপজেলার নামকরণ ইতিহাস সম্পর্কে তেমন কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

চারঘাট উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:

এক সময় কলকাতা বন্দর হতে আর এস, এন, আই, জি, এন, এবং আর কোম্পানীর বড় বড় ষ্টীমার এই অঞ্চলের থানাঘাট, ঠাকুর বাড়ীর ঘাট, ষ্টীমার ঘাট ও বাবুলালের ঘাটে আসা যাওয়া করত। প্রচলিত আছে অতীতের এই চারটি ঘাটের সংগে বর্তমান চারঘাট নামটি সম্পৃক্ত। হয়তোবা

পবা উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:

পবা মৌজা হতে পবা উপজেলার নামকরণ হয়। পূর্বে পবা মৌজায় পবা থানা অবস্থিত ছিল। সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর পবা মৌজা সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং পবা থানার নামকরণ করা হয় শাহমখদুম থানা। কিন্তু পবা উপজেলার নামটি অপরিবর্তিত থেকে যায়।

তথ্যসুত্র:

 

About Sabuj Vumi Editor

Check Also

নাটোর জেলার বিভিন্ন স্থানের নামকরণ ইতিহাস

নাটোর জেলার  নামকরণ ইতিহাস: চলনবিলের বিশাল জলাশয়ে বিভিন্ন প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ জন্মাতো, যেমনঃ- শাপলা, পদ্ম, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Flag Counter