Home / নামের ইতিহাস ও কিংবদন্তী / নাটোর জেলার বিভিন্ন স্থানের নামকরণ ইতিহাস

নাটোর জেলার বিভিন্ন স্থানের নামকরণ ইতিহাস

নাটোর জেলার  নামকরণ ইতিহাস:

চলনবিলের বিশাল জলাশয়ে বিভিন্ন প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ জন্মাতো, যেমনঃ- শাপলা, পদ্ম, নলখাগড়া ও হোগলা ইত্যাদি। আরেক ধরনের জলজ উদ্ভিদ জন্মাতো যার ফল ত্রিভুজাকৃতির, যা পানিফল নামে পরিচিত। মোঘল বাদশাহ আকবরের রাজত্বের সময় পূর্বাঞ্চল হতে কর আদায়ে চলনবিলের মধ্যদিয়ে নৌযানের সাহায্যে যাতায়াত করতে গিয়ে ঐ পানি ফলের এলাকায় এসে নৌযানগুলো বাধাপ্রাপ্ত হত। মোঘল যাত্রীগণ উক্ত পানি ফলের খোসা ছাড়িয়ে ভীত সম্ভ্রস্তভাবে কিঞ্চিত আস্বাদনে দেখলেন এটা একটা সুস্বাদু ফল বিশেষ। এরপর শুরু হয় নাম দেয়ার পালা। মোঘল দরবারে ঐতিহ্যবাহী খাবার সিঙ্গারার মত হওয়ায় এর নাম দেয়া হয় সিঙ্গার। আর বিলের এ অংশটির নাম দেয়া হয় “সিঙ্গার চলনবিল”। কালের বিবর্তনে এর নাম সিংড়া’য় রূপান্তরিত হয়। বর্তমানে সিংড়া নাটোর জেলার সবচেয়ে বড় উপজেলা। ১৯৯৮ সালে উপজেলা সদর নিয়ে সিংড়া পৌরসভা গঠিত হয়।
কথিত আছে, বর্তমান নাটোর শহরের ওপরেই একসময় চলনবিল বিস্তৃত ছিল। জনৈক রাজা নৌকায় চড়ে সেই স্থানের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় সাপকে ব্যাঙ ধরেছে দেখে নৌকার মাঝিদের ‘নাও ঠারো’ অর্থাৎ নৌকা থামাও বলেছিলেন। মতান্তরে ‘ন-ঠারো’ অর্থাৎ নৌকা থামিও না। তখন জলপথে দস্যু-তস্করের আক্রমণ হতো। তারাও দস্যুকবলিত হতে পারেন, এই আশঙ্কায় তাড়াতাড়ি স্থান ত্যাগ করতে ‘ন-ঠারো’ বলা হতো। আবার হিন্দু ধর্ম মতে, সাপকে ব্যাঙ ধরলে মনসাদেবী ক্রোধান্বিত হন। সুতরাং নৌকা থামিয়ে মনসা পূজা করাই হিন্দু রাজার পক্ষে সঙ্গত। সেজন্য ‘নাও ঠারো’ কথা থেকেই ‘নাটোর’ নামের উৎপত্তি হয়েছে বলে অনুমান করা হয়।
নাটোর জেলার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে নারদ নদী। কথিত আছে, এই নদীর নাম থেকেই ‘নাটোর’ শব্দটির উৎপত্তি। ভাষা গবেষকদের মতে, ‘নাতোর’ হচ্ছে মূল শব্দ। উচ্চারণগত কারণে এটি হয়ে গেছে ‘নাটোর’। নাটোর অঞ্চল নিম্নমুখী হওয়ায় চলাচল করা ছিল প্রায় অসম্ভব। এই জনপদের দুর্গমতা বোঝাতে বলা হতো ‘নাতোর’। ‘নাতোর’ অর্থ দুর্গম।

নাটোর জেলার উপজেলা সমুহ:  নাটোর সদর, সিংড়া, বড়াইগ্রাম, বাগাতিপাড়া, লালপুর, গুরুদাসপুর, নলডাঙ্গা

সিংড়া ‍উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:

চলনবিলে  একপ্রকার জলজ উদ্ভিদ জন্মাতো যার ফল ত্রিভুজাকৃতির  এ ফলগুলো পানিফল নামে পরিচিত। মোঘল বাদশাহ আকবরের রাজত্বের সময় পূর্বাঞ্চল হতে কর আদায়ে চলনবিলের মধ্যদিয়ে নৌযানের সাহায্যে যাতায়াত করতে গিয়ে ঐ পানি ফলের এলাকায় এসে নৌযানগুলো বাধাপ্রাপ্ত হত। মোঘল যাত্রীগণ উক্ত পানি ফলের খোসা ছাড়িয়ে ভীত সম্ভ্রস্তভাবে কিঞ্চিত আস্বাদনে দেখলেন এটা একটা সুস্বাদু ফল বিশেষ। মোঘল দরবারে ঐতিহ্যবাহী খাবার সিঙ্গারার মত হওয়ায় এর নাম দেয়া হয় সিঙ্গার। আর বিলের এ অংশটির নাম দেয়া হয় “সিঙ্গার চলনবিল”। কালের বিবর্তনে এর নাম সিংড়া’য় রূপান্তরিত হয়।

বড়াইগ্রাম ‍উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:

এ উপজেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে বড়াল নদীর দুটি শাখা।  উপজেলার অধিকাংশ গ্রামই বড়াল নদীর দুই ধারে অবস্থিত সে কারণে একে বড়ালগ্রাম বলা হ’ত। কালক্রমে বড়াল নদী থেকেই বড়াইগ্রামে উৎপত্তি হয়েছে। এককালের খালে ভরা জঙ্গলবৃত্ত স্থানটুকুই বর্তমানে বড়াইগ্রাম নামে পরিচিত। 

বাগাতিপাড়া ‍উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:

১৯০৬ সালে বাগতিপাড়া পুলিশ ষ্টেশন স্থাপিত হয়। প্রথমে থানার নাম ছিল বাগদী পাড়া। কথিত আছে তৎকালিন রেনউইক কম্পানী এবং নীলকর সাহেবগণ স্থানীয় বাগদীদের দ্বারা প্রজাদের উপর অত্যাচার ও নীপিড়ন চালাত। যার ফলে তাদের প্রতি ঘৃণার নিদর্শন স্বরূপ বাগদীপাড়া পুলিশ ষ্টেশনের নামকরন করা হয় বাগাতিপাড়া।
এই অঞ্চলে একসময় বাগদী নামে এক আদিবাসী নৃগোষ্ঠী বাস করতো। বাগদীরা যে এলাকায় বাস করতে তা স্থানীয় লোকজনের কাছে “বাগদী পাড়া” নামে নামে পরিচিত ছিল। এই বাগদী পাড়াই লোক মুখে বাগতিপাড়া রুপলাভ করে। 

আরো দেখুন:   বাংলাদেশের ৬৪ জেলা উপজেলা সহ বিভিন্ন স্থানের নামের ইতিহাস

লালপাড়া ‍উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:

লালপুর নামকরণের সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। মুঘল আমলে এখানে লালখান নামে একজন খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বসবাস করতেন। ধারণামতে তার নামানুসারেই এই উপজেলার নাম লালপুর হয়েছে। 

গুরুদাসপুর ‍উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:

কথিত আছে ইংরেজ আমলে বড় লর্ড এক ইংরেজকে জিজ্ঞাসা করেছিল তুমি কোন মুল্লক হতে আসিলে, এই যে হুজুর। যে মুল্লকের গুরু গোবিন্দ মাঝি খেয়ানৌকা পাড়াপার করিতেছে। আমি সেই মুল্লক হইতে আসিয়াছি। কালক্রমে মাঝির নাম অনুসারে গুরুদাসপুর নামকরণ করা হইয়াছিল।

স্থানীয়দের মতে গুরুদয়াল নামক সন্ন্যাসী এই একদা বাস করতেন। এই সন্ন্যাসীর নামানুসারে নামকরণ হয় গুরুদাসপুর। আরেকটি মতে গুরুদাস নামে একজন পাটনী এখানে বাস করতেন যারা নামানুসারে এলাকার নাম হয় গুরুদাসপুর।

নলডাঙ্গা ‍উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:

১৯৪৭ সালে স্থানীয়দের উদ্যোগে নলডাঙ্গার হাট প্রতিষ্ঠা করা হয়। ওই হাটকে ঘিরেই নলডাঙ্গা উপজেলার নামের সুত্রপাত।

দয়ারামপুর ‍ইউনিয়নের নামকরণ ইতিহাস:

১৮৯৪ সালে দিঘাপতিয়া রাজস্টেটের রাজা প্রমথ নাথ রায় তার কনিষ্ঠ তিন পুত্রের জন্য অত্র উপজেলার নন্দীকহজা মৌজায় একটি প্রাসাদ নির্মাণ করেন। নন্দীকহজা মৌজার এ রাজস্টেট গড়ে ওঠে দিঘাপতিয়া রাজ বংশের প্রতিষ্ঠাতা রাজা দয়ারামের নামে। তাঁর নাম অনুসারেই ইউনিয়নের নামকরণ করা হয় দয়ারামপুর ।

তথ্যসুত্র:  বাংলাট্রিবিউন  ,  জেলা তথ্যবাতায়ন, বলপেন

About Sabuj Vumi Editor

Check Also

ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন স্থানের নামকরণ ইতিহাস

ঝিনাইদহ জেলার নামকরণ ইতিহাস: জনশ্রুতি আছে প্রাচীনকালে বর্তমান ঝিনাইদহের উত্তর পশ্চিম দিকে নবগঙ্গাঁ নদীর ধারে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Flag Counter