Home / নামের ইতিহাস ও কিংবদন্তী / জয়পুরহাট জেলাবিভিন্ন স্থানের নামকরণ ইতিহাস

জয়পুরহাট জেলাবিভিন্ন স্থানের নামকরণ ইতিহাস

জয়পুর হাট জেলার পটভুমি ও নামকরণঃ

১৮৫৭ সাল থেকে ১৮৭৭ সাল পর্যন্ত দেশে ভীষণ দূর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এসময় দেশে রেল লাইন বসানোর কাজ শুরু হয়। ১৮৮৪ সালে কলকাতা হতে জলপাইগুডী পর্যন্ত ২৯৬ মেইল রেলপথ বসানো কাজ শেষ হলে লোকজনের উঠানামা ও মালামাল আমদানী রপ্তানির সুবিধার জন্য ৪-৭ মাইল পর পর রেলস্টেশন স্থাপন করা হয়। সান্তাহারের পরে তিলেকপুর ,আক্কেলপুর,জামালগঞ্জ এবং বাঘবাড়ীতে স্টেশন স্থাপিত হয়। সেসময় বাঘবাড়ী রেলস্টেশন কে জয়পুর গভর্ণমেন্ট ক্রাউনের নাম অনুসারে রাখা হয় জয়পুরহাট রেলস্টেশন। পরবর্তীতে রেলস্টেশনের সাথে পোস্ট অফিসের নাম জয়পুরহাট রাখার ফলে নামটি প্রসিদ্ধি পেতে থাকে। কিন্তু সরকারী কাগজপত্রে এর আসল নাম গোপেন্দ্রগঞ্জ বহাল থাকে। অন্য দিকে, প্রাকৃতিক দূর্যোগেরও বিপর্যয়ের ফলে যমুনার নব্যতা কমে যায় এবং ভাঙ্গনের ফলে লাল বাজার থানা হুমকির মুখে পরে। ফলে ভারত সরকারের নির্দেশে ১৮৬৮ সালে ১৬ মার্চ তারিখে লালবাজার পুলিশ থানা যমুনার অন্য তীরে খাসবাগুড়ী নামক গ্রামে স্থানান্তরিত করা হয়। সেই সময় স্থানটির নাম ছিল পাঁচবিবি। পরবর্তী কালে দমদমায় রেলস্টেশন স্থাপিত হলে পুলিশ থানা দমদমায় স্থানান্তরিত হয়। তৎকালে পাঁচবিবি নাম প্রসিদ্ধী লাভ করেছিল। তাই দমদমা রেলস্টেশন ও থানার নাম পূর্বের নাম অনুসারে পাঁচবিবি রেলস্টেশন রাখা হয়। দেশে রেল লাইন বসানোর পূর্বে জলপথে নৌকা এবং স্থলপথে ঘোড়া বা ঘোড়ার গাড়ি ছিল যাতায়াতে একমাত্র অবলম্বন । শ্বাপদ সংকুল জলপথে নৌকায় চরে যাতায়াত নিরাপদ ছিল না। আর এতে অধিক সময় ও অর্থ ব্যয় হয়। তাই রেল লাইন বসানোর পরে নদীপথে যাতায়াত বহুলাংশে কমে যায়। জয়পুরহাট রেলস্টেশন হওয়াতে ব্যবসার ও যাতায়াতের সুবিধার কথা চিন্তা করে বিত্তশালী ব্যাক্তিরা রেলস্টেশনের আশে বাসে বসতি গড়ে তোলেন। এতে খনজনপুর ও লাল বাজার হাট বিলুপ্ত হয়ে যায় । এবং বাঘাবাড়ী অর্থাৎ জয়পুরহাট প্রসিদ্ধ হতে থাকে। পরবর্তীতে বাঘাবাড়ী কে লিখিত হিসেবে গোপেন্দ্রগঞ্জ লিখা হতে থাকে। ১৯০৭ সালে বাঘাবাড়ী তে একটি পৃথক থানা ঘঠিত হয়, এবং জয়পুরহাট নামটি ব্যাপক ভাবে প্রচলিত হওয়ায় তা জয়পুরহাট থানা নামে পরিচিতি পায়। ১৯১৮ সালে জয়পুরহাট থানা ভবন নির্মিত হলে পাঁচবিবি থানাকে জয়পুরহাট থানার উত্তর সীমা রুপে নির্দিষ্ট করা হয়। ১৯২০ সালে ভূমি জরিপে জয়পুরহাট থানার একটি পৃথক নকশা অঙ্কিত হয়। জয়পুরের প্রাচীন রাজধানী অমবর/জয়পুর হতে পাচ মাইল দূরে অমবরের অধিষ্ঠাদেবী শীতলাদেবী । এই দেবী যশোহরের বারো ভুঁইয়ার অন্যতম। চাদারায় ও কেদারা রায়ের রাজধানী শ্রীপুর নগরীতে প্রতিষ্ঠিত হয়। মানসিংহ কর্তৃক চাদারায় পরাজিত হলে তিনি এই অষ্টভুজাদ দেবীমুর্তি আনয়ন করে স্থাপন করেন। এই সব কারনে জয়পুর বংগবাসীর নিকট প্রিয় হতে থাকে। বিশেষ করে জয়পুর ও মাড়োয়া রাজ্যের বহু লোক জয়পুরহাট এলাকাত স্থায়ী ভাবে বসবাস করায় জয়পুরের সাথে জয়পুরহাট এর গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এবং তাদের পূর্বের বাসস্থানের সংগে সংগতি রেখে খঞ্জনপুর নীল কুঠির এলাকা জয়পুর অভিহিত হতে থাকে। পরবর্তীতে রাজস্থানের জয়পুরের সংগে পার্থক্য বোঝাবার জন্য পোস্ট অফিস ও রেলস্টেশনের নাম রাখা হয়েছিল জয়পুরহাট রেলস্টেশন ও জয়পুরহাট পোস্ট অফিস। ১৯৭১ সালে ১লা জানুয়ারী তারিখে জয়পুরহাট মহকুমার ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে জয়পুরহাট কে জেলা ঘোষনা করা হয়।

জয়পুরহাট জেলার উপজেলা সমুহঃ

 আক্কেলপুর উপজেলা, কালাই উপজেলা, ক্ষেতলাল উপজেলা, পাঁচবিবি উপজেলা, জয়পুরহাট সদর।

আক্কেলপুর উপজেলার নামকরণ ইতিহাসঃ

জনশ্রুতিতে যতদূর শোনা যায় এ এলাকায় আক্কেল কাজী নামক একজন সম্পদশালী ব্যক্তি বাস করতেন। তার নাম অনুসারে এস্থানের নাম হয়েছে আক্কেলপুর। অন্যদিকে কথিত আছে যে,সাবেক “ইকুরকুরি”মৌজায় সপ্তদশ শতাব্দীতে হজরত শাহ মখদুম (রা:) নামক একজন ধর্মীয় সাধক সুদূর পারস্য থেকে ধর্ম প্রচারের জন্য আসেন। তিনি অনুভব করেনযেএখানকার লোকজন অত্যন্ত বুদ্ধিমান যার ইংরেজি শব্দ Intelligent এবংপারসিয়ান পরিভাষায় আক্কেল মান্দ নামে খ্যাত। সুতরাং স্থানীয় পত্র পত্রিকা ও শ্রুতি হতে জানা যায় যে পারস্য শব্দ আক্কেলমান্দ হতেই আক্কেলপুর নামকরণ করা হয়েছে। বিগত স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ১৯৭২ সালের সাবেক বগুড়া জেলার আদমদীঘি থানার কিছু অংশ নিয়ে প্রথমে আক্কেলপুর থানা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৮৪ সালে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রিকরণের আওতায় উপজেলায় উন্নীত হয়।

কালাই উপজেলার নামকরণ ইতিহাসঃ

অত্র ক্ষেতলাল উপজেলা থানা হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে ৭ ডিসেম্বর ১৮৭৪ খ্রিষ্টাব্দে এবং উপজেলা হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে ১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে। পুর্বে এটি বগুড়া জেলার অধীনে জয়পুরহাট মহকুমার একটি থানা ছিল। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো যে, এখানে শুধু একটি থানা ও একটি প্রাণী সম্পদ হাসপাতাল ছিল। এমনকি টিটিডিসি অফিস ও কালাই এলাকায় যা ক্ষেতলাল হতে ৬ কিলোমিটার দুরে। যেহেতু অধিকাংশ সরকারী অফিস কালাই এলাকায় অবস্থিত সেহেতু উপজেলা পদ্ধতি চালু করার সময় কালাই এলাকার জনগোষ্ঠির দাবী ছিল ক্ষেতলাল থানার নাম পরিবর্তন করে কালাই উপজেলার নামকরণ করা হোক। এর পর অনেক আলাপ অলোচনা ও বাক-বিতন্ডার পর অবশেষে ক্ষেতলাল থানাকে দুইভাগে বিভক্ত করে ক্ষেতলাল উপজেলা ও অপরটি কালাই উপজেলা  নামকরণ করা হয় । কালাই ও ক্ষেতলাল প্রতিটি উপজেলায় ০৫টি করে ইউনিয়ন আছে। জয়পুরহাট সদর হতে পূর্ব দিকে ১৪ কিলোমিটার দুরে এ থানার অবস্থান।

ক্ষেতলাল উপজেলার নামকরণ ইতিহাসঃ 

এ উপজেলার নামকরণ নিয়ে ভিন্নভিন্ন মত প্রচলিত আছে। পূর্বে এ জনপদের নাম ছিল কসবা। ধীরে ধীরে এটি কসবা ক্ষেতলালে রুপান্তরিত হয়। অবশেষে ক্ষেতলাল নামে পরিচিতি লাভ করে। ক্ষেতলাল নামকরন নিয়ে নিদির্ষ্ট কোন উৎস খুজে না পাওয়া গেলেও অত্র এলাকার সুধীজনদের মত অনুসারে দক্ষিন ভারতীয় একজন অধিবাসীর আগমনের পর ক্ষেতলাল নামকরণ হয় । যিনি এখানে দক্ষিন ভারত থেকে এসে বাজার চড়া এলকায় বসতী স্থাপণ করেন। যেটি বর্তমানে এস,এ কলেজ ক্ষেতলাল এবং ডাক বাংলোর নিকটে অবস্থিত। তিনি দীর্ঘ সময় অবস্থান করেন তার নাম অনুসারে এ এলাকার নামকরণ হয় ক্ষেতলাল । সুধীজনদের অন্য একটি পক্ষ এর মতে ক্ষেতলাল দীর্ঘ সময় ধরে ধান উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত ছিল।  ধান কর্তনের পূর্বে এ ধান ক্ষেতগুলো লাল আকার ধারণ করে। ধারনা করা হয় ক্ষেতলাল নামটি ক্ষেত এবং লাল এ দুটি শব্দ থেকে নেয়া হয়েছে।

পাচঁ বিবি উপজেলার নামকরণ ইতিহাসঃ

প্রচলিত বিশ্বাস থেকে জানা যায়, অতীতে এ অঞ্চলেএক আউলিয়া বাস করতেন। তাঁর স্ত্রীর সংখ্যা ছিল পাঁচ। স্ত্রীকে আঞ্চলিক কথ্য ভাষায় বিবি বলা হয় । আউলিয়ার এই পাঁচজন স্ত্রীই ছিলেন পর্দানশীল মহিলা। ধারণা করা হয়, আউলিয়া সাহেবের এই পাঁচ জন স্ত্রীর অর্থাৎ পাঁচ বিবি জন্যই এলাকা পাঁচ বিবি নামে পরিচিত হয়।

Read more: ৬৪ জেলা উপজেলা সহ বিভিন্ন স্থানের নামের ইতিহাস

জয়পুরহাট জেলার ইউনিয়ন সমুহের নামঃ

জয়পুরহাট সদর উপজেলার ইউনিয়ন সমুহঃ ধলাহার,  দোগাছী,  ভাদসা  মোহাম্মদাবাদ, পুরাণাপৈল,  জামালপুর, বম্বু, আমদই, চকবরকত
পাঁচবিবি উপজেলার ইউনিয়ন সমুহঃ বাগজানা, ধরনজি, আয়মারসুলপুর, বালীঘাটা, আটাপুর, মোহাম্মদপুর, কুসুম্বা, আওলাই

কালাই উপজেলার ইউনিয়ন সমুহঃ মাত্রাই, জিন্দারপুর, আহম্মেদাবাদ, উদয়পুর, পুনট

আক্কেলপুর উপজেলার ইউনিয়ন সমুহঃ রুকিন্দীপুর,   সোনামুখী, গোপীনাথপুর, তিলকপুর, রায়কালী

ক্ষেতলাল উপজেলার ইউনিয়ন সমুহঃ তুলশীগঙ্গা, বড়তারা,  মামুদপুর, বড়াইল,  আলমপুর

About Sabuj Vumi Editor

Check Also

ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন স্থানের নামকরণ ইতিহাস

ঝিনাইদহ জেলার নামকরণ ইতিহাস: জনশ্রুতি আছে প্রাচীনকালে বর্তমান ঝিনাইদহের উত্তর পশ্চিম দিকে নবগঙ্গাঁ নদীর ধারে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Flag Counter