ঠাকুরগাও জেলার নামকরণ ইতিহাসঃ
হিমালয়ের কোল ঘেঁষে অবস্থিত দেশের সর্ব উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁও। ঠাকুরগাঁও এর আদি নাম ছিল নিশ্চিন্তপুর।জনশ্রুতি ও মৌজার নাম নিশ্চিন্তপুর হওয়ায় অনুমান করা হতো ঠাকুরগাঁও সম্ভবত এক সময়ে নিশ্চিন্তপুর নামে পরিচিত ছিল। ১৭শ শতাব্দীর কোচবিহারের মানচিত্রে সংলগ্ন এলাকার যে অবস্থান দেখানো হয়েছে তাতে ঠাকুরগাঁও ও নিশ্চিন্তপুর নামে দু’টি আলাদা জায়গা চিহ্নিত রয়েছে। টাঙ্গন নদীর পূর্ব প্রান্তে দেখানো হয়েছে নিশ্চিন্তপুর এবং এরই কিছুটা উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গন নদীর পশ্চিম প্রান্তে দেখানো হয়েছে ঠাকুরগাঁও। এ থেকে পরিষ্কার বোঝা যায় যে, টাঙ্গন নদীর পূর্ব প্রান্তের নিশ্চিন্তপুরকেই পরবর্তীতে ঠাকুরগাঁও নাম দিয়ে সদরের নামকরণ করা হয়। আর এর মাধ্যমেই নিশ্চিন্তপুর রূপান্তরিত হয় ঠাকুরগাঁওয়ে। প্রথমে সমগ্র মহকুমা পরিচিত হয় ঠাকুরগাঁও নামে এবং পরে এরই ধারাবাহিকতায় জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের পরিচিতি। ঠাকুরগাঁওয়ের নামকরণের ইতিহাস সম্পর্কে আর যা পাওয়া গেছে তা হলো, বর্তমানে যেটি জেলা সদর অর্থাৎ যেখানে জেলার অফিস-আদালত অবস্থিত সেখান থেকে ৮ কিলোমিটার উত্তরে আকচা ইউনিয়নের একটি মৌজায় নারায়ণ চক্রবর্তী ও সতীশ চক্রবর্তী নামে দুই ভাই বসবাস করতেন। সম্পদ ও প্রভাব-প্রতিপত্তির কারণে তারা সেই এলাকায় খুব পরিচিত ছিলেন। সেখানকার লোকজন সেই চক্রবর্তী বাড়িকে ঠাকুরবাড়ি বলতেন। পরে স্থানীয় লোকজন এই জায়গাকে ঠাকুরবাড়ি থেকে ঠাকুরগাঁও বলতে শুরু করে। চক্রবর্তী বাবুরা এখানে একটি থানা স্থাপনের প্রয়োজন অনুভব করেন। তাদের অনুরোধে জলপাইগুড়ির জমিদার সেখানে একটি থানা স্থাপনের জন্য বৃটিশ সরকারকে রাজি করান। ১৮০০ খ্রিস্টাব্দের গোড়ার দিকে এখানে একটি থানা স্থাপিত হয় আর তার নাম দেওয়া হয় ঠাকুরগাঁও থানা।
ঠাকুরগাঁও জেলার উপজেলা সমুহঃ ঠাকুরগাঁও সদর, পীরগঞ্জ উপজেলা, রাণীশংকৈল উপজেলা, হরিপুর উপজেলা, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা।
পীরগঞ্জ উপজেলার নামকরণ ইতিহাসঃ
পীরগঞ্জ উপজেলার নামকরণ এর কারণ ও সময়কাল নিয়ে সুপ্রতিষ্ঠিত কোন ইতিহাস না থাকলেও অধিকাংশের মতে এই জনপদে সুলতানি আমলে ইসলাম ধর্ম প্রচার এবং ইসলামী ধ্যান-ধারণার গোড়াপত্তন হয়েছিল পীর মাশায়েখ সমাজের সাধক পুরুষ হযরত পীর সিরাজউদ্দিন আউলিয়া সাহেবের হাত ধরে। সমসাময়িক অনেক পীর আউলিয়া পীরগঞ্জে ধর্ম প্রচারের জন্য আসেন। তাদের মধ্যে অন্যতম দুর্লভপুর গ্রামের পীর বাহারানা সৈয়দ, সাটিয়া গ্রামের পীর শাহজাহী, ভেলাতৈড় গ্রামের পীর দরবারগাজী এবং পীরগঞ্জ সংলগ্ন গোগর গ্রামের বনপীর। পীর-মাশায়েখ ও আউলিয়াগণের পদচারণায় মুখরিত এ জনপদ সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী হতে শুরু করে। পীর আউলিয়াগণের এ অঞ্চল পরিচিতি পেতে থাকে পীরগঞ্জ নামে।
রানীশংকৈল উপজেলার নামকরণ ইতিহাসঃ
উনিশ শতকের প্রথম দিকে এই জনপদটি ছিল মালদুয়ার পরগনার অন্তর্গত। রাজা টন্কনাথ চৌধুরীর স্ত্রীর নাম জয়রামা শংকরী দেবী। ‘রাণী শংকরী’ দেবীর নামানুসারে মালদুয়ার এস্টেট হয়ে যায় রানীশংকৈল। রানীশংকৈল নামকরণের আরো একটি তথ্য পাওয়া যায়। আঠার শতকের শেষ দিকে মালদুয়ারের নাম ছিল ‘রামগঞ্জ’। সে সময় এলাকার জমিদারী ছিল দুই সহদেরার হাতে। নাথ এই সহোদরা যুগল ছিলেন চিরকুমারী। তাদের পুর্ণনাম জানা না গেলেও তারা পরিচিত ছিলেন বড় রানী ও ছোট রানী হিসেবে। এই রানী ভগ্নীদ্বয়ের নামানুসারে এ অঞ্চলের রানীশংকৈল হয়েছে বলে মনে করেন।
হরিপুর উপজেলার নামকরণ ইতিহাসঃ
অঞ্চলের নামকরণ নিয়ে লোকশ্রুতি আছে, অতীতে বর্তমান সদর এলাকায় কামরুন নাহার নামে এক বিধবা ও নিঃসন্তান জমিদার বাস করতেন। পার্শ্ববর্তী ভৈষ্য গ্রামের তিলি হিন্দু হরিমোহন ছিলেন তার নায়েব। খাজাঞ্চিখানার খাজনা দিতে গিয়ে তিনি নিজেই জমিদার হয়ে ফেরেন এবং জীবনপুর মৌজার জঙ্গল আত্নগোপন করেন। বহু অনুসন্ধানের পর জমিদার কামরুন নাহার তাকে তার নতুন আস্তানায় আবিষ্কার করেন এবং অভিশাপ দেন তিনি নিঃসন্তান থাকবেন। এই আস্তানাই আজকের দক্ষিণ দালাল এস্টের বসতবাটি। অতঃপর হরিমোহন নাম দিয়ে এখানে প্রতিষ্ঠা করেন তার জমিদারি কাছারি।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার নামকরণ ইতিহাসঃ
উপজেলার কোথাও কোথাও দোআশ মাটি পাওয়া গেলেও অধিকাংশ মাটিই বেলে মাটি। এ মাটিতে তেমন ভালো ফলন হতো না। কেবল কচু, বে গুন, আখ ইত্যাদি উৎপন্ন হতো। বেলে মাটিতে বালি পরিমান বেশি থাকে। বালিয়াডাঙ্গি মৌজা উপজেলার অন্যান্য গ্রামগুলো থেকে তুলনামুলকভাবে উচুতে অবস্থিত। তাই বালি আর ডাঙ্গীর (ডাঙ্গা) কারণে মৌজার নাম বালিয়াডাঙ্গি বলে হয়। এ মৌজা থেকে বালিয়াডাঙ্গি উপজেলার নাম হয়।
ঠাকুরগাও জেলার নামকরণ ইতিহাসঃ
সদর উপজেলা : রুহিয়া, আখানগর, আকচা, বড়গাঁও, বালিয়া, আউলিয়াপুর, চিলারং, রহিমানপুর, রায়পুর, জামালপুর,মোহম্মাদপুর, সালন্দর, গড়েয়া, রাজাগাঁও, দেবীপুর, নারগুন, জগন্নাথপুর, শুখানপুকুরী, বেগুনবাড়ী, রুহিয়া পশ্চিম ও ঢোলার হাট ।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা : পাড়িয়া, চাড়োল, ধনতলা, বড়পলাশ বাড়ী, দুওসুও, ভানোর, আমজানখোর ও বড়বাড়ি।
পীরগঞ্জ উপজেলা : সৈয়দপুর, ভোমরাদহ, কোষারাণীগঞ্জ, খনগাঁও, পীরগঞ্জ, হাজীপুর, দৌলতপুর, সেনগাঁও, জাবর হাট ও বৈরচুনা ।হরিপুর উপজেলা : হরিপুর, গেদুড়া, আমগাঁও, বকুয়া, ডাঙ্গীপাড়া ও ভাতুরিয়া ।
রাণীশংকৈল উপজেলা : ধর্মগড়, নেকমরদ, হোসেনগাঁও, লেহেম্বা, বাচোর, কাশিপুর, রাতোর ও নন্দুয়ার ।