চাঁদপুর জেলার নামকরণ ইতিহাস
বার ভূঁইয়াদের আমলে চাঁদপুর অঞ্চল বিক্রমপুরের জমিদার চাঁদরায়ের দখলে ছিল। এ অঞ্চলে তিনি একটি শাসনকেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন। ঐতিহাসিক জে. এম. সেনগুপ্তের মতে, চাঁদরায়ের নাম অনুসারে এ অঞ্চলের নাম হয়েছে চাঁদপুর। অন্যমতে, চাঁদপুর শহরের (কোড়ালিয়া) পুরিন্দপুর মহল্লার চাঁদ ফকিরের নাম অনুসারে এ অঞ্চলের নাম চাঁদপুর। কারো মতে, শাহ আহমেদ চাঁদ নামে একজন প্রশাসক দিল্লী থেকে পঞ্চদশ শতকে এখানে এসে একটি নদীবন্দর স্থাপন করেছিলেন। তার নামানুসারে নাম হয়েছে চাঁদপুর।
চাঁদপুর জেলার উপজেলা সমুহঃ হাইমচর, কচুয়া, শাহরাস্তি, চাঁদপুর সদর, মতলব, হাজীগঞ্জ, মতলব, ফরিদগঞ্জ।
হাইমচর উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:
লোকমুখে জানা যায়, হাইমচর উপজেলার সাথে শরিয়তপুর জেলার গোসাইরহাট ও বরিশালের মুলাদী থানার সীমানা নির্ধারন নিয়ে জটিলতা দেখা দিলে তা সমাধানের জন্য হেম বাবু নামে জনৈক দক্ষ সার্ভেয়ার নিয়োগ করা হয়। দক্ষতার সাথে তিনিই এ সীমানা সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন করতে সক্ষম হলে তাঁর নামানুসারে এখানকার নামকরণ হয় হাইমচর। অপর একটি সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, বিক্রমপুর জনৈক হেম বাবুর অত্র এলাকায়ি একটি ছোট জমিদারী পরগোনা ছিল। তার নামানুসারে এ জনপদের নামকরণ করা হয়েছে। ১৯৭৮ সালে চাঁদপুরের দক্ষিনাঞ্চলের ৬টি ইউনিয়ন একত্রে থানা করার সময় অত্র থানার নামকরণ হাইমচর নামে অভিহিত হয়।
কচুয়া উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:
“কচুয়া ভরপুর জলে ও স্থলে, সোনার মানুষ আর সোনা ফলে” কচুয়া থানার কচুয়া নামকরণের সঠিক তথ্য পাওয়া না গেলেও জনশ্রুতি হিসেবে তথ্য পাওয়া যায়। প্রথমটি হচ্ছে সেনিটিক ভাষায় উপশহরকে কাচওয়া বলে এই কাচওয়া শব্দ কালক্রমে লোকমুখে লোকান্তরিত হয়ে কচুয়া নামকরণ হয়। দ্বিতীয়টি হচ্ছে ১৯০৫ সালে হাজীগঞ্জ থানাকে দুইটি ভাগে বিভক্ত করে সীমানা অায়তন নির্ণ য়ের জন্য জরিপ কাজ চালানো হয়। একজন পুলিশ কর্মকর্তার নেতৃত্বে এই জরিপ কাজ পরিচালিত হয়। জরিপ কাজ শুরু হয় দাউদকান্দি থানার দক্ষিণ সীমানা অর্থাৎ কচুয়া থানার উত্তর প্রান্ত থেকে। জরিপ কাজে এক পর্যায়ে কাজে নিয়োজিত পুলিশ কর্মকর্তাও অন্যান্য লোকজন বর্তমানে কচুয়া বাজার সংলগ্ন উত্তর পার্শ্বে গ্রামের দক্ষিণের অংশে এসে কয়েকটি তালগাছের সন্ধান পেলে তালগাছ এলাকার উচুঁ স্থানে তাবু খাটিয়ে কয়েকদিন অবস্থান করেন (এ স্থান এলাকা বর্তমানে ধলিকচুয়া নামে পরিচিত) এ গ্রামের জৈনক মোঃ আলী আকমত পুলিশ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসা করেন আপনাদের জরিপ কাজ কতটুকু হয়েছে। উত্তরে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন “কুচহুয়া”। উর্দু শব্দ কুচ মানে কিছু এবং হুয়া মানে হয়েছে। অর্থাৎ কিছু অংশ হয়েছে। এ “কুচহুয়া” শব্দ হতে কচুয়া নাম করণ হয়।
শাহরাস্তি উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:
বাংলাদেশে আগত ৩৬০ জন আওলিয়ার মধ্যে উক্ত থানায় হযরত শাহরাস্তি (রাঃ) এর মাজার অবস্থিত। অত্র থানার জনগণের সমর্থনে হযরত শাহরাস্তি (রঃ) হুজুরের নামানুসারে শাহরাস্তি উপজেলার নামকরণ করা হয়।মতলব শেরশাহের শাসন কালে (১৫৩৯-১৫৪৪ খ্রীঃ) সর্বপ্রথম বাংলাদেশ জরিপ হয়শেরশাহ বাংলাকে সর্বমোট এক চলিস্নশটি পরগনায় বিভক্ত করেন মতলব চাঁদপুরের কিছু অংশ নিয়ে গঠন হয় মীর মহববত উল্লাহ (রঃ) এর নাম অনুসারে মহববতপুর পরগনা, বরদিয়া, বোয়ালিয়া, ও সিংহেরগাঁও পরগনার কিছু আংশ নিয়ে মহববতপুর পরগনা গঠিত হয়েছিল ১৭২৮ খ্রীস্টাব্দে প্রস্ত্ততকৃত রাজস্ব তালিকায় এর রাজস্ব নির্ধারিত হয় ৬৪৫৬ টাকা। ঢাকা নিবাসী সেম সাহেব নামক জনৈক ব্যক্তি সেই পরগনার জমিদারী লাভ করেন জমিদারীর কাজ কর্ম পরিচালনার জন্য তাহার পর থেকে মতলেব খাঁ নামক জ্ঞানী ও বিজ্ঞ ব্যক্তিকে অত্র এলাকায় নায়েব হিসেবে প্রেরণ করেন। মতলেবখাঁ দীঘলদী নামক গ্রামে জমিদারী কার্যালয় স্থাপন করেন সেই স্থানটিকে জমিদারের বের হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় বর্তমান মতলবের নাম ছিল জগনাতগঞ্জ। ১৬২৬ খ্রীস্টাব্দে ১২৫জন বৈরাগী এই বাজারটির প্রতিষ্ঠা করেন সেই সময় মতলব বাজারের পূর্ব অংশে অসংখ্য বট বৃক্ষ ছিল। এই স্থানে বৈরাগীদের আড্ডায় অনেক লোক আসা যাওয়া করত। চারি দিকে দোকানপাট গড়ে উঠে একটি বাজারে রূপান্তরিত হয়। পরবর্তী পর্যায়ে বাজারটি বৈরাগীহাট নামে পরিচিতি লাভ করে। মতলবেখাঁর আগমনে বাজারটি আগমনে বাজারটি আরও পশ্চিম দক্ষিণে প্রসারিত হয়। লোক মুখে মতলবে খাঁর হাট নামে পরিচিতি লাভ করে।
মতলব উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:
জনশ্রুতি আছে, মতলব নামকরণ করা হয়েছে এই অঞ্চলের বিখ্যাত প্রতাপশালী জমিদার মতলব হাওলাদারের নামানুসারে।
হাজীগঞ্জ উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:
হাজীগঞ্জ উপজেলার পটভূমি । হাজীগঞ্জ মেঘনার পূর্বপ্রান্তে অতি পুরাতন ব্যবসা-বাণিজ্যর কেন্দ্ররূপে খ্যাত । এগার’শ বাংলাসনের কাছাকাছি হাজী মকিম উদ্দিন (রঃ) নামে একজন বুজর্গ অলীয়ে কামেল ইসলাম ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে পবিত্র আরব ভূমি হতে স্ব-পরিবারে এ অঞ্চলে আগমন করেন। চাঁদপুর-কুমিল্লা রাস্তার উত্তর পাশে বর্তমান মসজিদের মাঝখানে একটি পুকুর ছিলো । সেই পুকুরের উত্তর পশ্চিম কোনে তিনি আত্তা স্থাপন করেন। কয়েক বছরের মধ্যে এ অলীয়ে কামেলের আগমন বার্তা ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করতে থাকে। পীরে কামেল হযরত মকিম উদ্দিন (রঃ) এর বংশের হাজী মুনির উদ্দিন (মনাই হাজী) (রঃ) পৈত্রিক খানকা শরীফে (হুজুরা নামে খ্যাত) আশেপাশে হতে আগত ভক্তগণকে নিয়ে ধর্ম কর্ম সম্পাদনের জন্যে মুরিদগণকে ছবক প্রদান করতেন। তিনি খুবই সাধাসিধে জীবন যাপন করতেন এবং সুন্নাতে রাসূল (সঃ) হিসেবে সম্পদায়ের জন্যে ব্যবসা কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে তৎসময়কার নাখালের উত্তর পাড়ে একটি দোকান প্রতিষ্ঠা করেন। নিত্য প্রয়োজনীয় এই দোকানের খ্যাতি অল্প দিনের মধ্যেই লোকমুখে রূপকথার ন্যায় ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে হাজী সাহেবের দোকানের নাম করন থেকে হাজীগঞ্জ বাজার নাম করন করা হয় ।
ফরিদগঞ্জ উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:
এ উপজেলার নাম কেন ফরিদগঞ্জ হয়েছিল তার ঐতিহাসিক তাৎপর্য সম্পর্কে বিভিন্ন ধারণা প্রচলিত আছে। এর মধ্যে সম্ভবত নিম্নের তিনটি ধারণার উপর ভিত্তি করে আজকের ফরিদগঞ্জ উপজেলার নামকরন করা হয়েছিল ‘‘ফরিদগঞ্জ’’। এক : বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, অনেক পূর্বে শেখ ফরিদ নামে একজন বিখ্যাত মুসলিম সাধক এই এলাকায় ইসলামধর্ম প্রচার করে বহু মানুষকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করেছিলেন। কারো কারো মতে, উক্ত সাধকের নামানুসারে এই এলাকার নাম রাখা হয়েছিল ফরিদগঞ্জ ।
দুই : পূর্বে এ এলাকায় তেমন কোন উল্লেখযোগ্য ব্যবসা কেন্দ্র ছিল না বলে জানা যায়। তবে এই এলাকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ডাকাতিয়া নদী পথে অনেক ব্যবসায়ীর যাতায়াত ছিল। তারা অনেক সময় রাত্রি যাপনের স্থান হিসাবে এই এলাকাটিকে সর্বাপেক্ষা নির্ভরযোগ্য স্থান মনে করে এখানে রাত্রি যাপন করত। এলাকায় তৎকালীন জমিদার স্থানীয় জনগণের সুবিধার্থে এই এলাকায় একটি ব্যবসা কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য স্থানীয় জনগণকে উৎসাহিত করেছিলেন। তার উৎসাহে সবচেয়ে বেশী উৎসাহিত হয়েছিলেন ফরিদ আলী নামে একজন ব্যবসায়ী। জনসাধারণকে আরো উৎসাহিত করার মানষে জমিদার উক্ত ফরিদ আলীর নামানুসারে বাজারটির নামকরন করেছিলেন ফরিদগঞ্জ।
তিন : এই উপজেলার অন্তর্গত তৎকালীন রূপসার জমিদারের প্রতাপ ছিল বেশী। তার পরিবারের একজন সদস্য ছিলেন ফরিদা বানু। জমিদার স্নেহবশে ফরিদা বানুর নামানুসারে এলাকাটির নামকরন করেন।