সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন স্থানের নামকরন ইতিহাস

সাতক্ষীরা জেলার নামকরন ইতিহাস :

সাতক্ষীরা জেলার নামকরণ প্রসঙ্গে কয়েকটি মত প্রচলিত আছে । এর মধ্যে প্রধান মতটি হ’ল চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সময় নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের এক কর্মচারী বিষ্ণুরাম চক্রবর্তী নিলামে বুড়ন পরগণা কিনে তার অন্তর্গত সাতঘরিয়া গ্রামে বাড়ী তৈরী করেন। তাঁর পুত্র প্রাণনাথ সাতঘরিয়া অঞ্চলে উন্নয়ন কাজ করে পরিচিত ও প্রতাপান্বিত হন। সাতক্ষীরার মহকুমার প্রকৃত জন্ম হয় ১৮৫২ সালে যশোর জেলার চতুর্থ মহকুমা হিসেবে এবং কলারোয়াতে এর সদর দপ্তর স্থাপিত হয়। প্রথম মহকুমা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন নবাব আব্দুল লতিফ। ১৮৬১ সালে মহকুমা কার্যালয় সাতঘরিয়া তথা সাতক্ষীরাতে স্থানান্তর করা হয়। ইতিমধ্যেই সাতঘরিয়া ইংরেজ রাজকর্মচারীদের মুখেই সাতক্ষীরা হয়ে গিয়েছিলো। তাই পুরানো সাতঘরিয়াই বর্তমানের সাতক্ষীরা।

সাতক্ষীরা জেলার উপজেলার নাম সমুহ: আশাশুনি , দেবহাটা, কলারোয়া, সাতক্ষীরা সদর উপজেলা, শ্যামনগর, তালা,  ও কালীগঞ্জ উপজেলা

আশাশুনি উপজেলার নামের ইতিহাস:

বৃটিশ শাসন আমলে প্রেসিডেন্ট বিভাগের চবিবশ পরগনা জেলার ভালুকা পরগনাভূক্ত আশাশুনি উপজেলাটি ছিল বন্যভূমি। সমগ্র এলাকাটি সুন্দরবনের অন্তর্ভূক্ত থাকায় বন্য হিংস্র জনও ব্যতিত কোন জনমানবের বাস এ এলাকাটিতে ছিল না।এ জঙ্গল এলাকা আবাদ হওয়ার ফলে এলাকার সৃষ্টি হয়। জনশ্রুতি হতে জানা যায় যে, সর্বপ্রথম এ মহলে আব্দুস সোবহান নামে একজন কামেল ফকির কয়েকজন শিষ্যসহ আশাশুনি মৌজার (তৎকালীন সুন্দববন) ঠিক মধ্যবর্তী স্থানে জঙ্গলের মধ্যে দুটি বৃহৎ বৃক্ষ দেখতে পান। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় বৃক্ষটির তলায় তিনি তাঁর ব্যবহ্নত হাতের আশা(লাঠি)টি মাটিতে গাড়েন এবং আস্থানা ঠিক করেন। তখনকার দিনে যে সমসত কাঠুরিয়া মৌয়ালী ও বাওয়ালীরা জঙ্গলে আসত। তারা বন্য হিংস্র জনওর ভয়ে উক্ত ফকিরের নিকট দোয়া প্রার্থনা করত। তারপর বনের কাঠ,গোলপাতা, মধু ইত্যাদি আহরণ করত এবং আশাগাড়া ফকির বলে উল্লে­খ করত। পরবর্তীতে বনের শ্রমিকদের কথামত দূর-দূরান্ত লোকেরা আশা এর কথা শুনত এবং আশা থেকে শুনি নাম হয় । এভাবে উলি­খিত ফকিরের আস্তানার আশেপাশে জনবসতি গড়ে উঠে এবং তদানীন্তন জরিপের সময় আশাশুনি নামে পরিচিতি লাভ করে

দেবহাটা উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:

কিংবদন্তি অনুসারে, অতীতে এই এলাকাটি হিন্দুদের সংখ্যাধিক্য তাকায় এখানে দেবদেবীর আরাধনা হতো। এ কারনে স্থানটির নাম রাখা হয় ‘দেবেরহাট’। কালক্রমে দেবেরহাট, দেবহাটায় পরিবর্তিত হয় বলে অনেকে মনে করেন। এই যুক্তির সমর্থনে দেবহাটা সদর থেকে কয়েক কিলোমিটার দক্ষিন-পূর্বে দেবীশহর নামে একটি গ্রামের কথা বলা হয় ।

আরো জানুন:  বাংলাদেশের ৬৪ জেলা উপজেলা সহ বিভিন্ন স্থানের নামের ইতিহাস

কলারোয়া উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:

জানা যায় এলাকার পূর্ব নাম ছিল হোসেনপুর। ব্রিটিশ আমলে বর্তমান কলরোয়া পশুরহাটের উত্তর -পশ্চিম পার্শ্বে ইংরেজদের একটি নীলকুঠী ছিল। সে সময় হোসেনপুর পরগনার জমিদার ছিলেন রানী রাসমনি। নীলকরদের অমানুষিক অত্যাচার – নির্যাতনে অতিষ্ঠ এলাকার কৃষকরা প্রতিকার প্রার্থনা করে রানী রাসমনির শরনাপন্ন হয়। এরপর একরাতে স্থানীয় জনগন উক্ত নীলকুঠি ভবনটি ভেংগে সমস্ত ধ্বংসাবেশষ পার্শ্ববতী বেতনা নদীতে ফেলে দেয়। রাতারাতি এই স্থানে কলা গাছ রোপন করা হয় । পরবর্তীতে কলাগাছ রোয়া থেকে হোসেনপুর কলরোয়া নামে পরিচিতি লাভ করে।

শ্যামনগর উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:

শ্যামনগর উপজেলার নামকরণ সম্পর্কে জানা যায়, শ্যামনগরের আদি অধিবাসীরা ছিল মহাভারতীয় যুগের মানুষদের বংশধর। শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন তাদের আরাধ্য দেবতা। শ্রীকৃষ্ণের শতাধিক নামের মধ্যে শ্যাম, গোপাল, গোবিন্দ, গোকুল, গোপী প্রভৃতি নাম বেশি পরিচিত ও প্রচলিত। সেকালেও ছেলেমেয়ে ও গ্রামগঞ্জের নামকরণ করা হতো দেব-দেবী ও অবতারদের নামে। সম্ভবত এখানকার আদি অধিবাসীরা তাঁদের প্রিয় দেবতা শ্রীকৃষ্ণের ‘শ্যাম’ নামানুসারে ‘শ্যামনগর’ রেখেছিলেন। অন্যমতে, ইংরেজ আমলে প্রথমে এখানে একটি ফাঁড়ি ছিল। পরবর্তী সময়ে ফাঁড়িটিকে থানায় উন্নীত করার সময় শ্যামসুন্দর নামে এক ভদ্রলোক প্রয়োজনীয় গৃহ নির্মাণের জন্য একখণ্ড জমি ইংরেজ সরকার। এথেকেও শ্যামনগর নাম হতে পারে।

তালা উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:

এছাড়াও প্রবাদ আছেে একদা এলাকার এক জেলে পাশ্ববর্তী নদীতে মাছ ধরার সময় অদ্ভুত এক তালা লাগান একটি বাক্স পায়। তখন জেলে বাক্সটি বর্তমান সদর এলাকায় নিয়ে আসেন। অদ্ভুত এই তালার নামে এই এলাকা তালা নাম সকলের কাছে পরিচিতি লাভ করে।

কালীগঞ্জ উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:

গ্রহণযোগ্য কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

সূত্র : জেলা তথ্য বাতায়ন ও ঐতিহাসিক বইপত্র।

About israt Tania

Check Also

বান্দরবান জেলার বিভিন্ন স্থানের নামকরণ ইতিহাস : 

বান্দরবান জেলার নামকরণ ইতিহাস :  বান্দরবান জেলার নামকরণ নিয়ে একটি কিংবদন্তি রয়েছে। এলাকার বাসিন্দাদের মতে, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *