সন্দ্বীপ: তিন হাজার বছরেরও পুরনো একটি দ্বীপ সন্দ্বীপ। এর নামকরণ নিয়ে নানা ধরনের তথ্য পাওয়া যায়। অনেকের মতে, সাগরের মধ্যে বালির স্তূপের মতো দেখায় বলে ইউরোপিয়ানরা একে ‘Sand-heap’ নামে ডাকতো। সেখান থেকে বর্তমান নামের উৎপত্তি। কেউ কেউ মনে করেন যে প্রাচীন স্বর্ণদ্বীপ হলো এর পূর্বনাম। এক সময় জাহাজ বানানোর জন্য দ্বীপটি বিখ্যাত ছিলো।
মহেশখালী দ্বীপ: মহেশাখালী বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ী দ্বীপ।
স্থানীয়দের অনেকেই মনে করেন, প্রায় ২০০ বছর আগে থেকে জায়গাটি মহেশখালী নামে পরিচিতি লাভ করে আসছে। নামকরণটা হয়েছিল বৌদ্ধ সেন মহেশ্বরের মাধ্যমে। তবে লোকমুখে দ্বীপের নাম নিয়ে এক মজার গল্প প্রচলিত আছে। অনেক আগে ছোট মহেশখালীতে (যার স্থানীয় আরেক নাম চরপাড়া) নূর মোহাম্মদ সিকদার নামের এক প্রভাবশালী লোকের বসবাস ছিল। তার ছিল পাহাড়ে হরিণ শিকারের শখ। একদিন হরিণ শিকারে বেরিয়ে সারা দিন ধরে কোনো শিকার না পেয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েন তিনি। একটি গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিতে গিয়ে প্রায় ঘুমিয়ে পড়তে যাচ্ছিলেন। আচমকা এক শব্দে তার তন্দ্রা ছুটে যায়। সঙ্গে সঙ্গে শব্দ অনুসরণ করে তাকাতেই তিনি লক্ষ্য করেন, শব্দটি আসছে একটি গাভীর নিকট থেকে। গাভীটি একটি মসৃণ পাথর খণ্ডের উপর নিজ বান থেকে দুধ ঢালছে। নূর মোহাম্মদ অবাক হয়ে খেয়াল করেন, এই গাভীটি তারই গোয়ালঘর থেকে কিছুদিন আগে হারিয়ে গিয়েছিল। যাহোক, পরে গাভী আর সেই সুন্দর পাথরের খণ্ডটি নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন নূর মোহাম্মদ। সেদিন রাতে তিনি স্বপ্নে এক মহাপুরুষের সাক্ষাৎ পান। স্বপ্নে সেই মহাপুরুষ তাকে বলছিলেন, এই পাথর খণ্ডটি যে সে বস্তু নয়; এটি একটি দেব বিগ্রহ। এই বিগ্রহ যেখান থেকে নিয়ে আসা হয়েছে সেখানেই রেখে আসতে হবে। শুধু তাই নয়, এর ওপর নির্মাণ করতে হবে একটি মন্দির, যার নাম হবে আদিনাথ।এই আদিনাথ মানে হচ্ছে হিন্দু দেবতা শিব, যার ১০৮টি নামের একটি হচ্ছে ‘মহেশ’। শিবের এই নামের ওপর ভিত্তি করেই পরবর্তীতে অঞ্চলটির নাম হয়ে যায় মহেশখালী।
সেন্ট মার্টিনস দ্বীপ: বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ হিসাবে সেইন্ট মার্টিনস দ্বীপের ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। ভৌগোলিকভাবে এটি তিন অংশে বিভক্ত– উত্তর পাড়া, দক্ষিণ পাড়া ও মধ্য পাড়া। এর মধ্যে উত্তর পাড়ার আলাদা একটি নাম রয়েছে। মূলত নারিকেল জিঞ্জিরা নামে স্থানীয়রা দ্বীপটিকে ডাকেন।
তালপট্টি দ্বীপ: মাত্র ১০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রয়েছে সীমানার দ্বন্দ্ব। ১৯৭০ সালের ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড়ের ঠিক আগে প্রথম এর অস্তিত্ব জানা যায়। ১৯৭১ সালে ভারত সরকারের নজরে এলে তাঁরা নিজস্ব নাম দেয় দ্বীপটিকে। একটি নাম হলো পূর্বাশা, অন্যটি নিউ মুর।
কুতুবদিয়া দ্বীপ: কুতুবদিয়া দ্বীপের সাথে জড়িয়ে আছে একটি বিখ্যাত বাতিঘরের নাম। বঙ্গোপসাগরে জাহাজ চলাচলের সুবিধা নিশ্চিত করতে ১৮৪৬ সালে নির্মিত হয় এটি, যা পরবর্তীতে জলোচ্ছ্বাস-ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে। প্রাচীন বাতিঘর আসলে বহু আগেই সমুদ্রে বিলীন হয়ে গেছে। কিন্তু এখনো পর্যটকরা ভিড় জমান বাতিঘরপাড়ায়।
মনপুরা দ্বীপ: মনপুরা দ্বীপ বাংলাদেশের কোন ভোলা জেলায় অবস্থিত। এ জেলার পূর্বনাম শাহবাজপুর। দ্বীপের নাম মনপুরা হওয়ার পিছনে অনেক মতভেদ আছে। স্থানীয় বায়োজ্যেষ্ঠদের মতে, দ্বীপের অপরূপ সৌন্দর্য ও উপকূলবর্তী খাবার আগন্তুকদের মন জয় করত। এ কারণেই দ্বীপ ও ইউনিয়নের নাম মনপুরা হয়েছে। অনেকের ধারণা, মনগাজী শাহবাজপুর জমিদারের কাছ থেকে ইজারা নেওয়া হয়েছিল বিস্তৃত এই জায়গাটি। ফলে তার নামের ওপর ভিত্তি করেই এলাকার নামকরণ করা হয়েছে। এ দ্বিপের নামকরণ নিয়ে একটি গল্পও প্রচলিত রয়েছে। জায়গাটিতে আগে বাঘ ও হাতির মত জন্তু-জানোয়ার বিচরণ করত। এক সময় মনগাজী নামের এক লোক বাঘের আক্রমণে শিকার হয়ে বেঘোরে প্রাণ হারান। সেই থেকে সবাই দ্বীপটিকে মনপুরা নামে ডাকতে শুরু করে।
মনপুরা দ্বীপের একটি কাহিনী নিয়ে একটি বাংলা চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে, নাম ‘মনপুরা’।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশের ৬৪ জেলা উপজেলা সহ বিভিন্ন স্থানের নামের ইতিহাস
দুবলার চর: দুবলার চর বাংলাদেশ অংশের সুন্দরবনের দক্ষিণে ছোট একটি উপকূলবর্তী দ্বীপ দুবলার চর। এই দুবলার চর মূলত রাসমেলার জন্য বিখ্যাত।
হাতিয়া দ্বীপ: কথিত আছে, বারো জন আউলিয়া মাছের পিঠে চড়ে বাগদাদ থেকে চট্টগ্রাম যাবার পথে এ দ্বীপে বিশ্রাম নিয়েছিলেন। দ্বীপটির অধিবাসীরা বিশ্বাস করেন যে আমাদের দেশের ইতিহাসে সেখানেই প্রথমবারের মতো ইসলাম প্রচারিত হয়। দ্বীপের নাম হল হাতিয়া দ্বীপ।
নিঝুম দ্বীপ: নোয়াখালী জেলায় অবস্থিত নিঝুম দ্বীপ মূলত কয়েকটি চর নিয়ে গঠিত। ইছা (চিংড়ি) মাছের সহজলভ্যতার জন্য এক সময় স্থানীয়ভাবে একে ইছামতির দ্বীপ বলা হতো। আবার বালির ঢিবির উপস্থিতির জন্য অনেকে বাইল্যার ডেইল নামেও ডাকতেন। তবে সরকারি জরিপ বিভাগ একজন মহিষ পালনকারীর (বাথানিয়া) নাম অনুযায়ী এর আনুষ্ঠানিক জরিপ করে বলে ধারণা করা হয়। জরিপের কাজে তাঁর সহায়তার জন্যই এমন নামকরণ। চর ওসমান নামে দ্বীপটি প্রথম পরিচিতি পায়।
সোনাদিয়া দ্বীপ: সোনাদিয়া দ্বীপ বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার অর্ন্তগত হোয়ানক ইউনিয়নে অবস্থিত একটি দ্বীপ। এটি জীববৈচিত্রের দ্বীপ নামেও পরিচিতি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সুবিধার জন্য সোনাদিয়া দ্বীপে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করার কথা ছিল।
ছেঁড়া দ্বীপ
এটি আসলে দ্বীপপুঞ্জ। ২০০০ সালের দিকে আবিষ্কৃত হয় । বেশ কয়েকটি ছোট ছোট দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত এই দ্বীপপুঞ্জ স্থানীয়দের কাছে ‘ছেঁড়াদিয়া’ বা ‘সিরাদিয়া’ নামেও পরিচিত।
তথ্যসুত্র: ডেইলি স্টার ঐতিহাসিক বইপত্র।