সুনামগঞ্জ জেলার নামকরন ইতিহাস:
সুনামদি’ নামক জনৈক মোগল সিপাহীর নামানুসারে সুনামগঞ্জের নামকরণ করা হয়েছিল বলে জানা যায়। ‘সুনামদি’ (সুনাম উদ্দিনের আঞ্চলিক রূপ) নামক উক্ত মোগল সৈন্যের কোন এক যুদ্ধে বীরোচিত কৃতিত্বের জন্য সম্রাট কর্তৃক সুনামদিকে এখানে কিছু ভূমি পুরস্কার হিসাবে দান করা হয়। তাঁর দানস্বরূপ প্রাপ্ত ভূমিতে তাঁরই নামে সুনামগঞ্জ বাজারটি স্থাপিত হয়েছিল। এভাবে সুনামগঞ্জ নামের ও স্থানের উৎপত্তি হয়েছিল বলে মনে করা হয়ে থাকে
সুনামগঞ্জ জেলার উপজেলা সমুহঃ
সুনামগঞ্জ সদর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর, ছাতক, জগন্নাথপুর, দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর, ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ, শাল্লা, দিরাই। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা বলা হয়ে থাকে, অতীতে বর্তমান এলাকা বসতিহীন ছিলো। এরপর বিশ্বম্ভর বর্মণ নামে এক জেলে সর্বপ্রথম এখানে এসে বসতি স্থাপন করেন। পরবর্তীতে এই জেলে এলাকায় খুবই প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন এবং তার নামানুসারে এলাকার নাম বিশ্বম্ভরপুর।
ছাতক উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:
ছাতক সুনামগঞ্জ জেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম উপজেলা।১৯৮০ সাল থেকে এটি থানা হিসেবে পরিচিত ছিল অতঃপর ১৯৮২ সালে ছাতককে উপজেলায় উন্নীত করা হয়। অপার সৌন্দর্যের অধিকারী ছাতক উপজেলার নাম করন সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া না গেলেও জনশ্রুতি এবং বিভিন্ন দার্শনিকদের দেওয়া মতামত থেকে ছাতক উপজেলার নামকরনের ইতিহাসের মোটামুটি একটি তথ্য পাওয়া গিয়েছে। ১ জনশ্রুতি আছেঃ চল ঘোড়া নাদামপুর, ছাতক বাজার কতদূর, আদিকাল থেকে ছাতক বাজারে সপ্তাহে একদিন হাট বসত,হাটে আসা বিক্রেতারা রোদ-বৃষ্টি থেকে বাঁচতে বাঁশ,বেত ও পাত্তি দিয়ে ছাউনী দেওয়া বেশ বড় আকারের ছাতা ব্যবহার করে তাদের দোকান পাট চালাত, তখন সারা বাজার ছাতায় ছাতায় ভরে যেত, ছাতা টাঙ্গিয়ে বাজার বসত বলে একে ছাতির বাজার বা ছাতার বাজার নামে অভিহিত করা হত। এক পর্যায়ে উক্ত ছাতার বাজার ’’ছাতক বাজারে’’ পরিণত হয়। ২। আরেকটি বিশ্লেষণ থেকে জানা যায় হযরত শাহজালাল (র) এর আগমন কালে জনৈক দরবেশ এ এলাকায় ঘর দুয়ার তৈরি না করে ছাতা টাঙ্গিয়ে বসবাস শুরু করেন। তাঁর আগমনে এলাকায় ধর্মপ্রাণ ভক্ত অলি- দরবেশের আনাগোনা শুরু হয়। তাঁরা অনুরূপভাবে ছাতা টাঙ্গিয়ে বসবাস শুরু করেন এবং তা একটি হাঁটে রূপ নেয়। তাই ছাতার বাজার পরবর্তীতে ছাতক বাজারে রুপান্তরিত হয়েছে । ৩। এ সম্পর্কে দার্শনিক জাতীয় অধ্যাপক দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ছাতাকে কেন্দ্র করেই ছাতক নাম হয়েছে বলে ছোট বেলা থেকেই জেনেছেন। ৪। ইতিহাস বেত্তা গবেষক মনির উদ্দিন চৌধুরীর মতে ছত্রাক নামধারী একদল লোক এ এলাকা আবাদ করেন বলে পরবর্তীতে উক্ত ছত্রাক থেকে ছাতক হয়ে যায়। প্রসঙ্গত তিনি বলেন, সামন্ত রাজাদের রাজ পরিষদে রাজার ছাতা ধারনকারীদেরকে ছত্রাক নামে সম্বোধন করা হত। উপরোক্ত দিকগুলির ঐতিহাসিক বিশে-ষনে পাওয়া যায় ছাতক শব্দটি তিনটি শব্দের সমষ্টি। শব্দ তিনটি হল(ক) ছা=ছাতা (খ) ত=তকি (গ) ক=কলম অথাৎ ছাতক অঞ্চলে আগত দরবেশ ও ধর্ম প্রচারক এর সাথে ছাতা -তকি-কলম ছিল বলে ধারনা করা হয় এ তিন শব্দের আদ্যাক্ষর মিলে ছাতক হয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জি পৃথিবীর সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত প্রবন এলাকা, যা ছাতক উপজেলার খুব নিকটবর্তী হওয়ায় ছাতকে ও প্রচুর বৃষ্টিপাত হত। এজন্য এ এলাকার লোকজন নিরাপদে চলাচলের জন্য রোদ-বৃষ্টিতে ছাতা ব্যবহার করে বাজার-হাট করত। এ থেকে ও ছাতার বাজার বা ছাতক বাজার নামকরন হয়ে থাকতে পারে।
জগন্নাথপুর উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:
জগন্নাথপুরের পূর্বনাম ছিল ‘পেডুয়া । শ্রুতি অনুসারে, জানা যায়, বিজয় মাণিক্য পেডুয়ার রাজা থাকাকালে জগন্নাথ মিশ্র নামে জনৈক ব্রাক্ষ্মণ রাঢ় দেশ থেকে পেডুয়ায় আগমন করেন। তিনি রাজা বিজয় মাণিক্যের কাছ থেকে রাজধানীর অদুরে কিছু জমি বন্দোবস্ত নিয়ে সেখানে বাসুদেব মন্দির স্থাপন করেন। প্রভুভক্ত রাজ বিজয় মাণিক্য তার ধর্মগুরু জগন্নাথ মিশ্রকে রাজ্যের প্রধান নির্বাচিত করেন। রাজ বিজয় মাণিক্য জগন্নাথ মিশ্রকে ভুমিদান করে সেই স্থানের নাম করেন জগন্নাথপুর।
দোয়ারাবাজার উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:
জানা যায়, একসময় এখানে গৌরগঞ্জ নামে একটি বাজার ছিল। কালক্রমে এই গৌরগঞ্জ বাজার দোয়ারাবাজার নামে পরিবর্তিত হয়। বলা হয়, সুরমা নদী যেখানে ঘুরে আবার এসেছিল, ঐ বাঁকের মুখে স্থাপিত বাজারই দোয়ারাবাজার।
তাহিরপুর উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:
ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সুবিন্যস্ত পর্বতরাজি তাহিরপুর উপজেলার এক পাশের বেষ্টনী ।ইতিহাস পাঠে জানা যায়, বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার গৌরিপুর জমিদারী এস্টেটের অধিনে ছিল তাহিরপুর ।অতিতে তাহিরপুর নামে কোন গ্রাম ছিলনা। নিম্ন বর্ণের হিন্দুরাই এই এলাকার বাসিন্দা ছিল । জনশ্রুতি আছে যে, স্থানীয় পঞ্চায়েতের বিচারে জনৈক তাহির আলী নামক একজন মুসলমান ব্যক্তি দোষী সাব্যস্থ হন এবং নিজ এলাকা ত্যাগ করে বর্তমান তাহিরপুর এলাকায় বসতি স্থাপন করেন। কালের প্রবাহে তাহির আলীর নামেই এলাকার নাম করণ করা হয় ।
ধর্মপাশা উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:
প্রচলিত বিশ্বাস মতে, মোঘল আমলে বহু ধর্মপ্রচারক এখানে আগমন করেন এবং খানকাহ প্রতিষ্ঠা করে ইসলামের মহান বাণী প্রচার করেন। কালক্রমে এই অঞ্চল একটি ধর্মীয় শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে খ্যাতি অর্জন করে। ধর্মপ্রচারকদের ব্যাপক আনাগোনার কারণে এই জনপদ ধর্মপাশ নামে পরিচিতি লাভ করে।
জামালগঞ্জ উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:
জামালগঞ্জ-এর নামকরণে ভাটীপাড়ার বয়োবৃদ্ধ জমিদার মরহুম এখলাছুর রহমান চৌধুরীর মতামত প্রণিধানযোগ্য। ১৯৬৪ সালে জনাব এখলাছুর রহমান চৌধুরীর দেয় তথ্য থেকে জানা যায় যে, তাঁদের বংশের পূর্ব পুরুষগণের মধ্যে জামাল ফারুকী নামে একজন প্রসিদ্ধ ব্যক্তি ছিলেন। তাঁকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ভাটীপাড়া এস্টেট কর্তৃক নতুন ক্রয়কৃত দুটি তালুকের নামকরণ করা হয় জামালগড় ও জামালপুর। অতঃপর সাচনা বাজারের সঙ্গে নদীর পশ্চিমপাড়ে প্রতিযোগিতামূলক একটি নতুন বাজার প্রতিষ্ঠিত হলে এর নামকরণ করা হয় জামালগঞ্জ। “জামাল”-আরবী শব্দ-এর অর্থ মনোরম বা সুন্দর এবং “গঞ্জ”শব্দের অর্থ বাজার বা যেখানে ক্রয়-বিক্রয় করা হয়। আবার “গঞ্জ”অর্থ শহরও বোঝায়। সে বিচারে জামালগঞ্জ হচ্ছে সুন্দর বা মনোরম শহর।
শাল্লা উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:
এ উপজেলার নাম করণ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোন কিছু জানা যায়নি। তবে কথিত আছে, শাল্লার পূর্ব নাম ছিল শাহাগঞ্জ বাজার। শাহানুর সামে এক আউলিয়ার নামের উপর শাহাগঞ্জ বাজার প্রতিষ্ঠিত হয় বলে জনশ্রম্নতি আছে। জানা যায় শাহানুর নামে ঐ আউলিয়া সব সময় আল্লা আল্লা বলে জিকির করতেন এবং তাঁর নামের প্রথম অক্ষর শা এবং জিকিরের ল্লা উভয় মিলে শাল্লার নামকরণ হয়েছে বলে জনশ্রুতি আছে। অন্য একটি জনশ্রুতিতে জানা যায়, উক্ত এলাকাটি এক সময় কালীদহ সাগরের অংশ বিশেষ থাকার কারণে এ অঞ্চলে ক্রমান্বয়ে পলি ভরাটের ফলে মানুষের বসবাস শুরু হয়। পাশাপাশি এখানে মৎস্য আহরণের সুযোগ থাকায় জেলেদের বসতি গড়ে উঠে। জেলেরা পানিতে জাল ভেসে থাকার জন্য ’সুলা’ ব্যবহার করত। উক্ত ’সুলা শব্দ থেকে কালান্তরে শাল্লা নামকরণ করা হয়।
এ উপজেলার নাম করণ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোন কিছু জানা যায়নি। তবে কথিত আছে, শাল্লার পূর্ব নাম ছিল শাহাগঞ্জ বাজার। শাহানুর সামে এক আউলিয়ার নামের উপর শাহাগঞ্জ বাজার প্রতিষ্ঠিত হয় বলে জনশ্রম্নতি আছে। জানা যায় শাহানুর নামে ঐ আউলিয়া সব সময় আল্লা আল্লা বলে জিকির করতেন এবং তাঁর নামের প্রথম অক্ষর শা এবং জিকিরের ল্লা উভয় মিলে শাল্লার নামকরণ হয়েছে বলে জনশ্রুতি আছে। অন্য একটি জনশ্রুতিতে জানা যায়, উক্ত এলাকাটি এক সময় কালীদহ সাগরের অংশ বিশেষ থাকার কারণে এ অঞ্চলে ক্রমান্বয়ে পলি ভরাটের ফলে মানুষের বসবাস শুরু হয়। পাশাপাশি এখানে মৎস্য আহরণের সুযোগ থাকায় জেলেদের বসতি গড়ে উঠে। জেলেরা পানিতে জাল ভেসে থাকার জন্য ’সুলা’ ব্যবহার করত। উক্ত ’সুলা শব্দ থেকে কালান্তরে শাল্লা নামকরণ করা হয়।
দিরাই উপজেলার নামকরণ
কালনি নদীর তীরে অবস্থিত এই উপজেলার নাম ’দিরাই’। অতীতে দিরাই এর নাম ছিল বাবাগঞ্জ বাজার। জিতরাম ও দ্বিদরাম নামক দুইজন প্রভাবশালী ব্যক্তি এ এলাকায় প্রথম দিকে বসবাস করত, তাঁদের নামে উপর ভিত্তি করে বাবাগঞ্জ বাজারের নাম ‘‘দিরাই বাজার হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ১০/১২/১৮৯২ খ্রিঃ তারিখে প্রকাশিত আসাম গেজেট নোটিফিকেশন নং-৫৯৫৪ মূলে এই উপজেলার নামকরণ করা হয় ’দিরাই।