সিরাজগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানের নামকরণ ইতিহাস

সিরাজগঞ্জ
সিরাজগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানের নামকরণ ইতিহাস

সিরাজগঞ্জ জেলার নামকরণ ইতিহাস:

জেলার বেলকুচি উপজেলায় সিরাজউদ্দিন চৌধুরী নামক একভূস্বামী (জমিদার) ছিলেন। তিনি তাঁর নিজ মহালে একটি ‘গঞ্জ’ স্থাপন করেন। তাঁর নামানুসারে এর নামকরণ করা হয় সিরাজগঞ্জ। কিন্তু এটা ততটা প্রসিদ্ধি লাভ করেনি। যমুনা নদীর ভাঙ্গনের ফলে ক্রমে তা নদীগর্ভে বিলীন হয় এবং ক্রমশ উত্তর দিকে সরে আসে। সে সময় সিরাজউদ্দিন চৌধুরী ১৮০৯ সালের দিকে খয়রাতি মহলরূপে জমিদারী সেরেস্তায় লিখিত ভুতের দিয়ার মৌজা নিলামে খরিদ করেন। তিনি এই স্থানটিকে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রধান স্থানরূপে বিশেষ সহায়ক মনে করেন। এমন সময় তার নামে নামকরণকৃত সিরাজগঞ্জ স্থানটি পুনঃ নদীভাঙ্গণে বিলীণ হয়। তিনি ভুতের দিয়ার মৌজাকেই নতুনভাবে ‘সিরাজগঞ্জ’ নামে নামকরণ করেন। ফলে ভুতের দিয়ার মৌজাই ‘সিরাজগঞ্জ’ নামে স্থায়ী রূপ লাভ করে।

সিরাজগঞ্জ জেলার উপজেলা সমুহঃ

বেলকুচি, চৌহালি, কামারখন্দ, কাজীপুর, রায়গঞ্জ, শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ, তাড়াশ, উল্লাপাড়া।

বেলকুচি উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:

জনশ্রুতি আছে, জমিদার সিরাজ আলী চৌধুরীর চিরকুমার চাচা হয়রত শাহ্ সুফি আফজাল মাহমুদ (রহঃ) একজন সাধক পুরুষ ছিলেন। তিনি বেলকুচি এলাকায় আধ্যাত্নিক সাধনায় ব্রত হন এবং বহু অলৌকিক মজেযার কারণে বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। তিনি কচি বেল কুচি কুচি করে কেটে তা ভিজিয়ে রাখতেন এবং সরবত বানিয়ে সর্বরোগের একমাত্র ওষুধ হিসেবে মানুষ কে দিতেন। তা পান করে তারা আরোগ্য লাভ করতো। বেলকুচির কারণে স্থানের নাম হয় বেলকুচি। আবার কৃষিবিদ আব্দুর রাজ্জাক লিখেছেন, ব্রিটিশ আমলের প্রথম দিকে জন বিল কেছ নামক এক ইংরেজ ভুমি জরিপের জন্য এখানে এসে মৃত্যু বরণ করেন। তার স্মৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন কর জায়গার না করা হয় বিলকেছ। পরবর্তীতে তা রুপনেয় বেলকুচি হিসেবে।

চৌহালী উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:

চৌহালী উপজেলা নামকরনের সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য পাওয়া যায়না ।তবে বৃহত্তর পাবনা জেলার ইতিকথা বই হতে যতটুকু ধারনা পাওয়া যায় তাতে দেখা যায় যে, অবিভক্ত ভারত বর্ষের সময় হতে চৌহালী উপজেলার স্থল চর ইউনিয়নে চৌয়াইল নামে একটি মৌজা আছে । এই স্থল পাকরাশি জমিদারদের একটি বড় বাজার ছিল। এই বাজারে ০৪ সের দুধ ০১ সের হিসেবে বিক্রি হতো। অর্থাৎ ০১ সের সমান ৮০ তোলা কিন্তু স্থল পাকরাশির ০১ সের সমান ৮০ গুন x৪০ = ৩২০ তোলা ০১ সের হিসেবে বিক্রি হতো । ধারনা করা হয় যে, এখান থেকেই চৌহালী উপজেলার নাম করণ করা হয়েছে ।

আরো জানুন:  বাংলাদেশের ৬৪ জেলা উপজেলা সহ বিভিন্ন স্থানের নামের ইতিহাস

কামারখন্দ উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:

উপজেলার নামকরণ সম্পর্কে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

কাজীপুর উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:

বর্তমান এলাকায় এক সময় এক বিখ্যাত কাজী বংশের বসতি ছিল। এই কাজী বংশ থেকেই এই এলাকার নামকরণ হয় কাজপুর। অপর একটি সুত্র থেকে জানা যায়, বর্তমান কাজীপুর মৌজায় একসময় একটি কাজী অফিস ছিল, যা থেকে এই অঞ্চল কাজীপুর নামে পরিচিতি লাভ করে।

রায়গঞ্জ উপজেলা র নামকরণ ইতিহাস:

ব্রিটিশ শাসন আমলে তৎকালীন প্রভাবশালী জমিদার রায় পরিবারের পুরোধা শ্রীমান হরিদাশ রায় ঠাকুরের নাম থেকে রায়গঞ্জ নামের উৎপত্তি।

তাড়াশ উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:

তাড়াশ উপজেলার নামকরণের বিষয়ে সর্বজনগ্রাহ্য কোন ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে পুরাতন বই-পুস্ত্তক ও প্রচলিত কাহিনী থেকে নামকরণের দুটি তথ্য পাওয়া যায়। তাড়াশ উপজেলাটি একসময় গহীন জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল। প্রচলিত লোক কাহিনী থেকে জানা যায়, বোনাই নগর ফরিদপুরের জমিদার বনমালী রায় বাহাদুর নৌ ভ্রমণে আসার পথে তাড়াশ ও কহিতের মাঝামাঝি স্থানে একটি গাভীকে সাঁতার কেটে আসতে দেখেন। রায় বাহাদুর সাহেবের কৌতুহল জাগে, ‘‘প্রায় দুই কিলোমিটার পথ পার হয়ে গাভিটি কি কারণে জঙ্গলে প্রবেশ করছে?’’। জঙ্গলে বাঘ থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। তিনি গাভিটিকে অনুসরণ করার নির্দেশ দেন। গাভিটিকে অনুসরণ করার পর দেখা যায়, গাভিটি বনের মাঝামাঝি একটি উঁচু জায়গায় তার বাট থেকে দুধ ঝেড়ে দিচ্ছে। রাজার কৌতুহল আরো বেড়ে যায়। পরে তিনি দেখতে পান, দুধ ঝেড়ে দেওয়ার জায়গায় কয়েকটি ফাটল আছে। ফাটল থেকে কিছু মাটি সরানোর পর একটি শিবলিঙ্গ দেখা যায়। এমন বিস্ময়কর ঘটনা দেখে রায় বাহাদুর স্থানটিকে পূণ্যস্থান মনে করে সেখানে শিবলিঙ্গ স্থাপণ করেন এবং জঙ্গল পরিষ্কার করে অত্র এলাকায় একটি রাজ বাড়ী স্থাপণ করেন যার নির্দশন এখনও আছে। রায় বাহাদুর সাহেবের মায়ের নাম ভবানী, যার নামানুসারে তাড়াশের ১৫ কিলোমিটার উত্তরে ভবানীপুর নাম করণ করা হয় এবং মা ভবানীর মন্দির স্থাপন করা হয়। রায় বাহাদুরের মেয়ের নাম ছিল তারা দেবী। অনেকে মনে করেন, জমিদারের মেয়ের নাম তারা থেকে তারাশ, পরবর্তীতে তাড়াশ নামের উৎপত্তি। নামকরণের বিষয়ে দ্বিতীয় মতটি হলোঃ জঙ্গলে পরিপূর্ণ তাড়াশে এক সময় বাঘ, ভাল্লুক এবং ডাকাতদের ত্রাসের রাজত্ব ছিল। সে কারণে ত্রাস থেকে তারাশ বা তাড়াশ নামের উৎপত্তি।

শাহজাদপুর উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:

বৃটিশ শাসনামলে এই উপজেলায় একটি মুনসেফ কোর্ট এবং একটি জেলখানা ছিল। এটি বর্তমানে সিরাজগঞ্জ জেলার একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা। কথিত আছে যে, ১২৫০ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের ইয়েমেনের শাহজাদা হযরত মখদুম শাহদৌলা (রহঃ) ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে তিন ভাগ্নে (১) খাজাকালীন দানিশমন্দ (২) খাজা নূর (৩) খাজা আনওয়ার, তাঁদের মাতা (মখদুম সাহেবের ভগ্নি), বার জন প্রসিদ্ধ দরবেশ এবং কিছু সংখ্যক সহচর নিয়ে নদী পথে জাহাজে রওনা দেন। তিনি তাঁর সহচরদের নিয়ে একসময় বর্তমান শাহজাদপুর ভূখণ্ডে এসেপৌঁছেন। তিনি এখানে ইসলাম প্রচার শুরু করলে স্থানীয় হিন্দু রাজার সাথে তাঁরযুদ্ধ বেঁধে যায় এবং তিনি সেই যুদ্ধে শহিদ হন। কিন্তু স্থানটি মুসলমানদের দ্বারা বিজিত হয়। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর সহচরদের প্রচেষ্টায় এখানে ইসলাম ধর্ম প্রতিষ্ঠিত হয় (ড. এনামুল হক, পূর্ব পাকিস্তানের ইসলাম, পৃষ্ঠা-২৪০)। ইয়েমেনের সেই সাধক বীর শহিদ হযরত মখদুম শাহদৌলা (রহঃ) এর নাম অনুসারে এ ভূখণ্ডের নামকরণ হয়েছে।

উল্লাপাড়া উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:

কালস্রোতের নিরস্তর ধারায় সৃষ্ট হয় নতুনতর জনপদ, নগর সভ্যতা; যুগোত্তীর্ণ হওয়ার গৌরবে অভিষিক্ত হয় মানবতার কল্যাণে নিবেদিত প্রাণ অসংখ্য জনতা। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় এই অঞ্চলের অধিকাংশ স্থানই ছিল জলমগ্ন, প্রকৃতিগত কারণে সামঞ্জস্যতায় উল্লাপাড়া নামের উৎপত্তি হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। জনশ্রুতিতে জানা যায় উপজেলার পূর্ব পাশ দিয়ে প্রবাহিত ফুলজোড় নদী বিবর্তনের স্রোতে নাব্যতা হারায়, অব্যাহত ধারায় জেগে উঠা চরাঞ্চলে সৃষ্টি হয় কাশবন যা উলুবন হিসেবে খ্যাত, সেই ‘উলু’র পরিবর্তিত রূপ উলা থেকে উল্লা। উলুবন এলাকায় জনবসতী গড়ে উঠলে এলাকার নামকরণ হয় উলুপাড়া, পরবর্তীতে উলুপাড়াই উল্লাপাড়া হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

তথ্যসুত্র:  জেলা  তথ্য বাতায়ন

About Sabuj Vumi Editor

Check Also

সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন স্থানের নামকরন ইতিহাস

সাতক্ষীরা জেলার নামকরন ইতিহাস : সাতক্ষীরা জেলার নামকরণ প্রসঙ্গে কয়েকটি মত প্রচলিত আছে । এর …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *