ভোলা জেলার বিভিন্ন স্থানের নামকরণ ইতিহাস

ভোলা জেলার নামকরণ ইতিহাস:

ভোলার নামকরণের পেছনে স্থানীয়ভাবে একটি কাহিনী প্রচলিত আছে । ভোলা শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া বেতুয়া নামক খালটি এখনকার মত অপ্রশস্ত ছিলনা এটা নদীর মতো ছিল নাম ছিলো বেতুয়া নদী । থুব বুড়ো এক মাঝি খেয়া নৌকার সাহায্যে লোকজনকে এ নদী পারাপারের কাজ করতো। মাঝীর নাম ছিল ভোলা গাজি পাটনি তার আস্তানা ছিল আজকের যোগীর ঘোলের কাছেই। ছিল । এই ভোলা গাজির নামানুসারেই একসময় নামকরণ হয় ভোলা ।

ভোলা জেলা  উপজেলার নামের তালিকা : ভোলা সদর, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, লালমোহন, তজুমদ্দিন, মনপুরা, চরফ্যাশন।

দৌলতখান উপজেলার নামকরণ ইতিহাস : 

নামকরণ এর ইতিহাস নিয়ে উল্লেখ্য যোগ্য একাধিক মতবাদ পাওয়া যায়। মোগল শাসন আমলে সম্রাট শাহজাহানের সেনাপতি শাহবাজ খান তার সামন্তসেনা দৌলতখানের সহায়তায় মগ ও পর্তুগীজ দস্যুদের কঠোর হস্তে দমন করে এ এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনেন। ফলে তার পরিচিতি ছিল অনেক। দৌলতখান পরিবার অতি সমৃদ্ধ ও সন্ভ্রান্ত ছিল। এই দৌলতখান এর নামানুসারে এ উপজেলার নামকরণ করা হয় বলে ধারণা করা হয়।

বোরহানউদ্দিন উপজেলার নামকরণ ইতিহাস :

ফরিদপুরের উপসীর কালী প্রসন্নের নামানুসারে কয়েক বছর বর্তমান বোরহানউদ্দিন উপজেলা কালীগঞ্জ নামে পরিচিত ছিল। ১৮৭২ সালের ১৫ই জানুয়ারি এই অঞ্চল সার্ভে হয়।  এরপর ইহা বোরহানউদ্দীন হাওলাদারের হাট নামে পরিচিতি লাভ করে। তখন বরমগঞ্জ (বর্তমান বোরহানগঞ্জ অথবা বরহানগঞ্জ বাজার) এলাকা ভট্টচার্য্যদের আর বোরহানউদ্দীন হাট এলাকা হাওলাদারদের ছিল। ১৯৩৯ সালের দিকে বর্তমান বোরহানউদ্দিন জামে মসজিদের মুসল্লিদের ব্যবহারের নিমিত্ত তৈরী পুকুরের ঘাটলা বন্ধ করে দেওয়ায় মুসলমানদের ভিতর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। প্রথমে কয়েক দফা মামলা মকদ্দমা পরে সংঘর্ষ হয়। অনেক তিক্ততার পরে বর্তমান থানা পর্যন্ত রাস্তার উভয় পাশে মোট ৫৫ ফুট জায়গা বোরহানউদ্দিন হাওলাদারের নামে বন্দোবস্ত নিয়ে বর্তমান নাম বোরহানউদ্দিন দেয়া হয়। 

লালমোহন উপজেলার নামকরণ ইতিহাস :

 লালমোহনের আধি নাম ছিল মেহেরগঞ্জ।  আনুমানিক ১৯০৪ সালের দিকে বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক অবস্থান ও সুযোগ সুবিধা বিবেচিত করে স্থানীয় মরহুম মেহের আলী পাটোয়ারী তার নিজস্ব ভূমির উপর একটি সাধারণ হাট বা বাজার প্রতিষ্ঠা করেন। নিজের নাম অনুসারে এর নাম রাখেন ‘মেহেরগঞ্জ’।  লালমোহন ভূমি অফিসের একজন তহসিলদার সুকৌশলে একটি মৌজার নাম নিজের নামে ‘লালমোহন’ রাখেন। একারনে এ অঞ্চল লালমোহন নামেই পরিচিতি পায় এ অঞ্চল। চাপা পড়ে যায় ঐতিহ্যবাহী মেহের আলী পাটোয়ারীর নামের ‘মেহেরগঞ্জ’। তবে মেহেরগঞ্জ নামে একটি মৌজা এখনো রয়েছে। 

তজুমদ্দিন উপজেলার নামকরণ ইতিহাস :

স্থানীয় জমিদার নায়েব তজুমদ্দীনের নামে তজুমদ্দিন উপজেলার নামকরণের ইতিহাস পাওয়া যায়।

মনপুরা উপজেলার নামকরণ ইতিহাস :

১৮৩৩ সালের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের আগেও এই দ্বীপটির অস্তিত্ব ছিল এবং সে সময় এটি আংশিকভাবে সুন্দরবন বনাঞ্চলের একটি দ্বীপ হিসেবে বিবেচিত হতো। ষোড়শ শতাব্দীর শুরুতে এই দ্বীপ বাকলা চন্দ্রদ্বীপ জমিদারী প্রথার অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেই সময়ে কয়জন ইউরোপীয় পরিব্রাজক ভারথেমা লি ব্র্যাংক, সিজার ফ্রেডরিক ও মউনরিক এই
আইসিজেডএমপি দ্বীপে ভ্রমণে আসেন। এই ভ্রমণকালেই মি, মউনরিক তৎকালীন দক্ষিণ শাহবাজপুর ও চর মনপুরাকে উদ্ভিদ বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ দ্বীপ হিসেবে চিহ্নিত করেন। ১৫১৭ সালে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য চর মনপুরাকে নির্বাচন করে এবং বসতি স্থাপন করে। সেই সময় দ্বীপটির অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নদী-জলাশয়ের মাছ, পশুসম্পদ, মহিষের দুধ, দই, পনির যে কোন আগন্তুকের মন ভরিয়ে দিত বলে এই চরের নামকরণ করা হয় চর মনপুরা। তবে, এই দ্বীপটির নামকরণের ইতিহাস আলোচনায় ঐতিহাসিক বেভারীজ-এর সূত্র থেকে জানা যায়, স্থানীয় ঐতিহ্য মতে জনৈক মনগাজী নামের ব্যক্তি সেই সময়ের জমিদারী থেকে মনপুরা চর লীজ নেন অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে এবং সেখানে তিনি কৃষিকাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে তার নামানুসারে এই দ্বীপটির নামকরণ করা হয় চর মনপুরা। লোককাহিনী মতে, মনগাজী নামের একজন মাঝি বাঘের আক্রমণে প্রাণ হারালে এর নাম হয়ে যায় চর মনপুরা।

আরো দেখুন:  বাংলাদেশের ৬৪ জেলা উপজেলা সহ বিভিন্ন স্থানের নামের ইতিহাস

চরফ্যাশন উপজেলার নামকরণ ইতিহাস :

 চরফ্যাশন পূর্বে কখনো নোয়াখালী, কখনো বরিশাল আবার কখনো বা পটুয়াখালীর গলাচিপার সাথে সংযুক্ত ছিল।  এ চরফ্যাশন ছিল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অসংখ্য চর। ঠিক তখনই বরিশালের জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট এইচ,জে,এইচ ফ্যাশন সাহেব ১৮৮৫-৮৭ সালের দিকে প্রশাসনিক ভাবে এ অঞ্চলের চরগুলির প্রতি দৃষ্টি দেন এবং এলাকার প্রান কেন্দ্র বর্তমান চরফ্যাশন বাজারটি গঠন করেন। মিঃ ডোনাবানের পরিকল্পনা অনুসারে প্রস্তাবিত এ বাজারের নাম রাখা হয় চরফ্যাশন বাজার। পরবর্তীতে এলাকার একমাত্র প্রানকেন্দ্র চরফ্যাশন বাজারের নাম অনুসারে গোটা এলাকার নাম করন করা হয় চরফ্যাশন।

গঙ্গাপুর গ্রামের নামকরণ ইতিহাস:
বোরহানউদ্দীন উপজেলার একটি গ্রাম গঙ্গাপুর।  এই এলাকার নামকরণের সাথে স্থানীয় জমিদার পরিবারের বা সিকদার পরিবারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। কথিত আছে, হিজলা থানার গঙ্গাপুর থেকে জনৈক আব্দুল মান্নান সিকদার এই এলাকায় এসে বসতি স্থাপন করেন এবং এলাকাটির নামকরণ করেন গঙ্গাপুর। তিনি এখানে জমিদারী পত্তন করেন।

চর কুকড়ি মুকড়ি নামকরণের ইতিহাস:
চর ফ্যাশনের মূল ভূ-খন্ডের দক্ষিণে প্রত্যন্ত অঞ্চলে চর কুকড়ি মুকড়ি অবস্থিত। এটি ভোলার একটি অতি প্রাচীন অসংরক্ষিত দ্বীপ।  কথিত আছে, চর সৃষ্টির আদি দশায় দ্বীপটিতে অসংখ্য কুকুর আর ইঁদুর ছিল। ইঁদুর-এর আরেক নাম মেকুর আর সেই থেকেই এই দ্বীপের নামকরণ করা হয় চর কুকড়ি মুকড়ি। 

তথ্যসুত্র:  জেলা তথ্য বাতায়ন,  রুপালী বার্তা

About Sabuj Vumi Editor

Check Also

সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন স্থানের নামকরন ইতিহাস

সাতক্ষীরা জেলার নামকরন ইতিহাস : সাতক্ষীরা জেলার নামকরণ প্রসঙ্গে কয়েকটি মত প্রচলিত আছে । এর …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *