পটুয়াখালী জেলার উপজেলা সমুহঃ
১. পটুয়াখালী সদর উপজেলা ২. দুমকি উপজেলা ৩. মির্জাগঞ্জ উপজেলা ৪. দশমিনা উপজেলা ৫. বাউফল উপজেলা ৬. কলাপাড়া উপজেলা ৭. গলাচিপা উপজেলা ৮. রাঙ্গাবালী উপজেলা
পটুয়াখালী জেলার ইউনিয়ন সমুহঃ
পটুযাখালী সদর উপজেলার ইউনিয়ন সমুহ: আউলিয়াপুর, বদরপুর, লাউকাঠি, কালিকাপুর, লোহালিয়া, ইটবাড়ীয়া, কমলাপুর, বড়বিঘাই, ছোট বিঘাই, জৈনকাঠী, মরিচবুনিয়া, মাদারবুনিয়া, ভুরিয়া , মির্জাগঞ্জ, দেউলী, সুবিদখালী, কাকড়াবুনিয়া, মজিদবাড়ীয়া, মাধবখালী, মজিদবাড়ীয়া, আমড়াগাছিয়া।
কলাপাড়া উপজেলার ইউনিয়ন সমুহ: চাকামইয়া, টিয়াখালী, লালুয়া, মিঠাগঞ্জ, নীলগঞ্জ, খাপড়াভাঙ্গা, লতাচাপলী,
ধানখালী, ধুলাসার, বালিয়াতলী, ডালবুগণ্জ, চম্পাপুর, দশমিনা, রনগোপালদী, আলীপুরা, বেতাগী সানকিপুর, দশমিনা,
বহরমপুর, বাঁশবাড়ীয়া, চর বোরহান,
বাউফল উপজেলার ইউনিয়ন সমুহ:কাছিপাড়া, কালিশুরী, ধুলিয়া, কেশবপুর, সূর্যমনি, কনকদিয়া, বগা
মদনপুরা, নাজিরপুর, কালাইয়া, দাসপাড়া, বাউফল, আদাবাড়ীয়া, নওমালা, চন্দ্রদ্বীপ, গলাচিপা, আমখোলা, গোলখালী।
গলাচিপা উপজেলার ইউনিয়ন সমুহ: পানপট্টি, রতনদী তালতলী, ডাকুয়া, চিকনিকান্দি, বকুলবাড়িয়া, চরকাজল, চর বিশ্বাস, কলাগাছিয়া, গজালিয়া, রাঙ্গাবালী, রাঙ্গাবালী, ছোট বাইশদিয়া, বড়বাইশদিয়া, চালিতাবুনিয়া
চর মোন্তাজ,
দুমকি উপজেলা ইউনিয়ন সমুহ: শ্রীরামপুর, পাংগাশিয়া, লেবুখালী, মুরাদিয়া, আংগারিয়া
পটুয়াখালী জেলার নামকরণের ইতিহাস
বাউফল উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:
১৭৯০খ্রিঃ লর্ড কর্নওয়ালিশ ভারত শাসন সংস্কার আইনে বাকেরগঞ্জ জেলাকে ১০টি থানায় বিভক্ত করেন। এর মধ্যে বাউফল থানা অন্যতম। তাছাড়া ১৮৬৭ সালের ২৭ মার্চ কোলকাতা গেজেটে পটুয়াখালী মহকুমা সৃষ্টির ঘোষণা প্রকাশিত হয়। এ মহকুমার অধীনে ৪টি থানার মধ্যে বাউফল অন্তর্ভূক্ত ছিল। পূর্বে এ এলাকায় ছিল অনেক ধরণের বৃক্ষাদি, এই বৃক্ষাদির মধ্যে এক ধরণের গাছ জনসাধারণের কাছে বাউ গাছ নামে অত্যন্ত সুপরিচিত ছিল এবং ঐ গাছের নাম অনুসারে অত্র এলাকার নাম হয় বাউফল। ১৮৭৪ সালের আগস্ট মাসে যখন এখানে পুলিশ স্টেশন করা হয় তখন উক্ত নাম ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। আগা বাকের খাঁর শাসন আমলে দক্ষিণ বাংলার ইতিহাস অনুযায়ী অত্র এলাকার নাম বাউফল হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
দুমকী উপজেলা নামকরণ ইতিহাস:
দুমকী নামটি সম্পর্কে যতটুকু জানা যায় তাহলো দুমকী নামটির উৎপত্তি মূলত দ্বি-মূখী একটি খালের নাম থেকে । পটুয়াখালী জেলার লেবুখালী ইউনিয়নের দুমকী একটি গ্রাম। এলাকার তৎকালীন মুরববীগন এম. কেরামত আলী সাহেবের সম্মানে দুমকী গ্রামের নামেই দুমকী পুলিশ থানার নামকরণ করেন। দুমকী থানা ভবন পটুয়াখালী কৃষি কলেজ সব কিছুই শ্রীরামপুর মৌজায় থাকা সত্বেও কেহই ইহার বিরোধীতা করেন নাই। ১৯৯৪ সালের ২২ অক্টোবর উপজেলার দাবীনামা এবং উপজেলার প্রশাসনিক ভবনের স্থান নির্ধারনে এবং হারুন-অর-রশীদ হাওলাদারের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি কর্তৃক দুমকী নামকরণকে প্রাধান্য দিয়ে বহাল রাখা হয়।
কলাপাড়া উপজেলা নামকরণ ইতিহাস:
উপজেলার নাম কলাপাড়া হলেও খেপুপাড়া নামে সমভাবে পরিচিত। খেপু ও কলাউ নামে রাখাইন দুই ভাই জঙ্গল কেটে এই অঞ্চল মানুষের বসবাসের উপযোগি করে তোলে। কথিত আছে উপজেলা শহরের মধ্য দিয়ে উত্তর দক্ষিণে প্রবাহিত একটি খালের দুই পাড়ে খেপু মগ ও কলাউ মগ বাস করত । পূর্ব পাড়ে কলাউ মগ ও পশ্চিম পাড়ে খেপু মগ। কলাউ মগের নামানুসারে পূর্ব পাড়ের বসতির নাম কলাপাড়া এবং খেপু মগের নামানুসারে পশ্চিম পাড়ের বসতির নাম হয় খেপুপাড়া।
খেপু ও কলাউ রাঙ্গাবালী উপজেলা থেকে এখানে এসেছে বলে জানা যায়। কলাউ ছিলেন বড় ভাই আর খেপু ছিলেন ছোট ভাই। দুই জন দুই পাড়ার মাতবর ছিলেন। কলাউ মাতবর প্রায় ৮০ বৎসর বেঁচে ছিলেন। তাঁদের ঘর-বাড়ি ও সমাধি আন্ধার মানিক নদীতে বিলীন হয়ে গিয়েছে।
মির্জাগঞ্জ উপজেলা নামকরণ ইতিহাস:
মির্জাগঞ্জ উপজেলাসৃষ্টির ইতিহাস বহু পুরণো। জনশ্রুতি আছে যে, এখানে মির্জাদের জমীদারীএস্টেট ছিল। তারাই এই এলাকার মানুষের সুখ-দু:খের সাথি ছিল। তাদের জমি-জমা চাষাবাদ করত এতদ অঞ্চলের মানুষ। শিক্ষা ও ধর্মীয় মিক্ষা বিস্তারে তাদের অনেক আবদান ছিল। মির্জারাই এ এলাকার মানুষের হ্রদয় স্থান পেয়েছিল। এই মির্জাদের নাম অনুসারেই ধারনা করা হয় যে, মির্জাগঞ্জ নাম করন করা হয়েছে। ১৮১২ সালে থানা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এর পর আর পিছনে তাকাতে হয়নি। ১৯৮ ৪ সালে উপজেলায় রুপান্ত্রিত হয়।
রাঙ্গাবালী উপজেলা নামকরণ ইতিহাস:
রাঙ্গাবালী উপজেলার নামকরনের সঠিক ইতিহাস জানা যায়নি। তবে কথিত আছে যে, সাগর বক্ষে নতুন বালুচর সৃষ্টির ফলে কালের বিবর্তনে এই বালুচরের বালু লাল ছিল। এই ‘‘লাল’’ শব্দটি আঞ্চলিক ভাষায় রাঙ্গা নামে পরিচিত। এ থেকে রাঙ্গাবালি নামের উৎপত্তি। ইতিহাসবেত্তাগন জানান ১৭৮৪ সালে কতিপয় রাকাইন জনগোষ্ঠী আরাকান রাজ্য থেকে পালিয়ে এসে এ অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে। তখন থেকে এতদঞ্চলে জনবসতি শুরু হয়।
পটুয়াখালীর দর্শনীয় স্থান
কুয়াকাটা কোথায় অবস্থিতঃ
কুয়াকাটা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি সমুদ্র সৈকত ও পর্যটনকেন্দ্র। পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর থানার লতাচাপলী ইউনিয়নে কুয়াকাটা অবস্থিত। ঢাকা থেকে সড়কপথে এর দূরত্ব ৩৮০ কিলোমিটার এবং বরিশাল থেকে ১০৮ কিলোমিটার।
কুয়াকাটা নামকরণ ও ইতিহাসঃ
কুয়াকাটা নামের পেছনে রয়েছে আরকানদের এদেশে আগমনের সাথে জড়িত ইতিহাস। ‘কুয়া’ শব্দটি এসেছে ‘কুপ’ থেকে।
কুয়াকাটা নামকরণের ইতিহাসের পেছনে যে কুয়া সেটি এখনও টিকে আছে। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের কাছে রাখাইনদের বাসস্থল কেরানীপাড়ার শুরুতেই প্রাচীন কুয়ার অবস্থান। ধারণা করা হয় ১৮ শতকে মুঘল শাসকদের দ্বারা বার্মা থেকে বিতাড়িত হয়ে আরকানরা এই অঞ্চলে এসে বসবাস শুরু করে। তাদের মাধ্যমেই এই স্থানটির নামকরণ হয় কুয়াকাটা। জনশ্রুতি আছে ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে বার্মিজ রাজা বোদ্রোপা আরকান জয় করে রাখাইনদের ওপর অত্যাচার ও নির্যাতন চালায়। ১৫০টি রাখাইন পরিবার বার্মিজদের হাত থেকে মুক্তির জন্য ৫০টি নৌকায় তিনদিন তিনরাত বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা থানাধীন মৌডুবি এলাকায় উপস্থিত হন। উক্ত অঞ্চলটি তখন বন জঙ্গলে ভর্তি ছিল। তারা বনের হিংস্র জীব জন্তুর সঙ্গে যুদ্ধ করে, জঙ্গল কেটে পরিষ্কার করে ধান ফল-মূলের বীজ বপন করে জীবিকা নির্বাহ করতো । তখন ওই বনের কোন নাম ছিল না থাকলেও রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজন তার নাম জানত না। যার ফলে সাগর পাড়ি দিয়ে ওই স্থানে বসবাস শুরু করায় রাখাইন ভাষায় তারা নামকরণ করে কানশাই। কিন্তু রাখাইন লোকজন এখানে বসবাস করলেও তাদের প্রধান প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাড়ায় পানি। সাগরের পানি লবণাক্ত হওয়ায় তা খাওয়া সম্ভবপর ছিল না। এজন্য তারা নিজ উদ্যোগে একটি কুয়া খনন করে তা থেকে মিঠা পানি পান করত। মিঠা পানির কুয়ার নামানুসারে স্থানটির নামকরণ হয় কুয়াকাটা। কুয়ার সন্নিকটেই তারা স্থাপন করে ৩৭ মণ ওজনের ধ্যানমগ্ন অষ্টধাতুর বৌদ্ধ মূর্তি। মন্দিরের নির্মাণ সৌন্দর্যে ইন্দোচীনের স্থাপত্য অনুসরণ করা হয়। দেখলে মনে হবে থাইল্যান্ড, লাওস বা মিয়ানমারের কোন মন্দির। প্রায় সাড়ে তিন ফুট উঁচু বেদির উপর মূর্তিটি স্থাপন করা হয়েছে। বৌদ্ধ ধর্মের আড়াই হাজার বছর পূর্তি উপলক্ষে ৮৩ বছর পূর্বে অষ্টধাতুর ওই মূর্তিটি ওই স্থানে স্থাপন করা হয় বলে রাখাইন সম্প্রদায়ের ইতিহাস থেকে জানা যায়। প্রায় ৭ ফুট উচ্চতার এ বৌদ্ধ মূর্তিটি স্থাপন করেন উপেংইয়া ভিক্ষু। মন্দিরের নীচেই হচ্ছে ঐতিহাসিক কুয়াটি। বর্তমানে সেই কুয়ার পানি খাওয়ার অনুপযোগী অর্থাৎ পরিত্যক্ত। তারপরও কুয়াকাটার ঐতিহ্য ধরে রাখতে কুয়াটিকে নতুনভাবে সংস্কার করা হয়েছে।
কুয়াকাটার সুর্যোদয়ঃ
কুয়াকাটার অপার নৈসর্গিক সৌন্দর্য নিজের চোখে না দেখলে বোঝানো কঠিন। যা শুধু দেখলেই উপভোগ করা যায়। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে এ সৈকত থেকেই কেবল সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করা যায়। সূর্যোদয়ের সময় মনে হয় বিরাট এক অগ্নিকুণ্ড আস্তে আস্তে সাগর ভেদ করে আসমানের উপরে দিকে উঠে যাচ্ছে। আবার সূর্যাস্তের সময় সাগরের ঢেউয়ের মধ্যে আস্তে আস্তে হারিয়ে যায় সূর্যটা। মনে হয় সাগরের মধ্যেই সূর্যের বাড়ি ঘর। পূর্ণিমার রাতে সী-বিচের সৌন্দর্য সবকিছুকে হার মানায়। চাঁদের আলোয় বিশাল বিশাল ঢেউগুলো যেন কাছে ডাকে। আর অমাবস্যায় অন্ধকার রাতে দেখা যায় আরেক দৃশ্য ফসফরাসের মিশ্রণে সাগরের ঢেউগুলো থেকে আলোর বিচ্ছুরণ ছড়ায়। কুয়াকাটার সী-বিচের সৌন্দর্য লিখে শেষ করা সত্যিই খুব কঠিন ব্যাপার। পর্যটকদের কাছে কুয়াকাটা “সাগর কন্যা” হিসেবে পরিচিত। ১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সৈকত বিশিষ্ট কুয়াকাটা বাংলাদেশের অন্যতম নৈসর্গিক সমুদ্র সৈকত। সৈকতের পূর্ব প্রান্তে গঙ্গা-মতির বাঁক থেকে সূর্যোদয় সবচেয়ে ভালোভাবে দেখা যায়। আর সূর্যাস্ত দেখার উত্তম জায়গা হল কুয়াকাটার পশ্চিম সৈকত।