Home / সবুজ ভুমি / নোয়াখালী জেলার বিভিন্ন স্থানের নামকরণ ইতিহাস

নোয়াখালী জেলার বিভিন্ন স্থানের নামকরণ ইতিহাস

নোয়াখালী জেলা নামকরণের ইতিহাস : নোয়াখালী জেলার প্রাচীন নাম ছিল ভুলুয়া। নোয়াখালী সদর থানার আদি নাম সুধারাম। ইতিহাসবিদদের মতে একবার ত্রিপুরার পাহাড় থেকে প্রবাহিত ডাকাতিয়া নদীর পানিতে ভুলুয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চল ভয়াবহভাবে প্লাবিত হয় ও ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় হিসাবে ১৬৬০ সালে একটি বিশাল খাল খনন করা হয়,যা পানির প্রবাহকে ডাকাতিয়া নদী হতে রামগঞ্জ, সোনাইমুড়ি ও চৌমুহনী হয়ে মেঘনা এবং ফেনী নদীর দিকে প্রবাহিত করে। এই বিশাল নতুন খালকে নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় নোয়া (নতুন) খাল বলা হত, এর ফলে অঞ্চলটি একসময়ে লোকের মুখেমুখে পরিবর্তিত হয়ে নোয়াখালী হিসাবে পরিচিতি লাভ করতে শুরু করে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নামকরণ ইতিহাস: কোম্পানীগঞ্জের নামকরণের ইতিহাস খুঁজলে জানা যায়, কোম্পানীগঞ্জ তথা যোগিদীয়া ছিল বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক সমুদ্র বন্দর। ১৭৫৩ সালে এই স্থানে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী কুঠি স্থাপন করে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করে। ১৭৫৬ সালে কোম্পানী একটি বস্ত্রকল স্থাপন করে, পরে ফরাসীরাও এখানে বিশাল কাপড়ের কল স্থাপন করে এবং স্থানীয় যোগী (তাঁতী) দের উৎপাদিত দেশীয় বস্ত্রসহ এসব কাপড় এবং লবন যোগিদীয়া সমুদ্র বন্দর দিয়ে বিদেশে রপ্তানী হত। ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী নামানুসারে পরবর্তীতে এই স্থানের নামকরণ করা হয় কোম্পানীগঞ্জ।

বেগমগঞ্জ উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:
১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে নোয়াখালী জেলার জনবহুল বেগমগঞ্জ থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। এ থানার নামকরণের উৎপত্তি সম্পর্কে নির্দিষ্ট কিছু জানা যায়নি। এটা জানা গিয়েছে যে, মোগলদের রাজতুকালে তৎকালীন বাংলার সুবেদার শায়েস্তা খান তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে এ এলাকা পরিদর্শনে আসেন। তাঁর পরিদর্শনের পর হতে এ এলাকা বেগমগঞ্জ নামে পরিচিতি লাভ করে।
হাতিয়া উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:
হাতিয়ার নামকরণ সম্পর্কে  মজার ও আকর্ষণীয় কিংবদন্তী রয়েছে। ।  হাতিয়ার নামকরণ প্রবাদের দুটি প্রধান ধারা লক্ষ্যণীয়। তন্মধ্যে একটি হাতিয়া অন্যটি হাতি প্রবাদ নামে খ্যাত। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ হাফেজ মাওলানা এ কে মোমাজাদ আহমদ তার ‘আমার দেখা হাতিয়া’ প্রবন্ধে উল্লেখ করেন- ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের সময় এক ইংরেজ আলোচ্য দ্বীপে উঠে এ এলাকার নাম কী জিজ্ঞাসা করেন। জবাবে এলাকার লোকজন বলে হাটিয়া। এরপর থেকে ইংরেজ দ্বারা হাটিয়া নামজারি হয়ে গেল। যা পরবর্তীকালে বাংলা উচ্চারণের সুবিধার্থে হয়ে গেল হাতিয়া।
মৌলভি জামাল উদ্দিন বলেন, ফরাসিরা বাণিজ্য করতে ভারতীয় উপমহাদেশে আসেন। তারা নদীপথে এ অঞ্চল দিয়ে যাতায়াত করত। হাতিয়া তখন মাত্র দুটি দ্বীপ। সাগরদি ও নিলক্ষী। দূর থেকে তা দেখতে তলোয়ার বা হাতিয়ার এর মতো মনে হতো। এ হাতিয়ার বা তলোয়ার থেকে হাতিয়া নামের উৎপত্তি। অ্যাডভোকেট শরিফ মো. নুরুল ইসলাম বলেন- সন্দ্বীপের দিলাল রাজার একটি হাতি ছিল। হাতিটি হাতিয়া ভূ-খণ্ডের পাশে একটি কর্দমাক্ত খালে আটকা পড়ে মারা যায়। পরবর্তীকালে এ ভূ-খণ্ডের নাম হয়- ‘হাতি’-পা-আ থেকে হাতিয়া’৷
দ্বীপের বিখ্যাত কবি আবদুর রশিদ তার পিতার লিখিত পুথির আলোকে বলেন- একদা এ অঞ্চলে বড় ধরনের জলোচ্ছ্বাসে কোথা থেকে একটি হাতি ভেসে আসে এবং দ্বীপের খালে আটকা পড়ে মৃত্যু ঘটে বিধায় এ দ্বীপের নাম হয় হাতিয়া।
দ্বীপের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী দ্বীপের নামকরণ সম্পর্কে বলেন-একদা এ দ্বীপে জলদস্যুদের দৌরাত্ম্য ও অত্যাচার ছিল। জলদস্যুদের অত্যাচারের খবর তৎকালীন বাংলার শাসক শেরশাহ-এর নিকট পৌছলে তিনি দস্যুদের দমনের জন্য হাতিয়াল খাঁ নামক সেনাপতির নেতৃত্বে একদল সৈন্য প্রেরণ করেন এবং অত্যন্ত সুনামের সহিত দস্যুদের দমন করে জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনেন। এ সেনাপতির নামানুসারে এ দ্বীপের নামকরণ করা হয় হাতিয়াল দ্বীপ’। কালক্রমে হাতিয়াল থেকে ‘ল’ উঠে গিয়ে এর নাম হয় হাতিয়া স্বীপ।
সুবর্ণচর উপজেলার নামকরণ ইতিহাস: ১৯৭৩ সালে চরাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের স্বাস্থ্য সেবার জন্য চরজব্বর স্বাস্থ্য কমপ্রেক্স এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ২০০০ সালে চরজব্বর থানা সৃষ্টি হয়। এ ধারাবাহিকতায় সদর উপজেলার দক্ষিণাংশের চরাঞ্চলের কয়েকটি ইউনিয়ন নিয়ে নতুন সুবর্ণচর উপজেলার সৃষ্টি হয়। নোয়াখালী সদর উপজেলার দক্ষিণের চরাঞ্চলের নতুন ভূমি খুব উর্বর, সৌন্দর্যমণ্ডিত এবং সন্তাবনাময়। পূর্বে মূলত চরজব্বর, চরবাটা এবং চরক্লার্ক এ তিনটি ইউনিয়ন নিয়ে সদর উপজেলার দক্ষিণের চরাঞ্চল গঠিত ছিল। সুশোভিত বৃক্ষরাজি, বনভূমি এবং রূপালি চর ও মৎস্য সম্পদের সম্ভাবনার সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে বিবেচনায় তৎকালীন জেলা প্রশাসক জনাব মোস্তফা কামাল হায়দার এ উপজেলার নাম সুবর্ণচর নামে অভিহিত করেন।
কবিরহাট  উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:
সোবেক ঘোষবাগ ইউনিয়নের বর্তমান কবিরহাট পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ড  প্রখ্যাত বাসিন্দা জনাব কবির পাটোয়ারী ছিলেন এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী।  ১২৫ বছর পূর্বে তিনি তার বাড়ির আঙিনার কাছে একটি দোকান স্থাপন করেন। কালক্রমে এলাকার মানুষের চাহিদা মেটাতে তিনি তার দোকানটি আরো উত্তর দিকে স্থানান্তর করেন। কালের বিবর্তনে সেখানে গড়ে ওঠে একটি হাট।  এভাবে যে হাট গড়ে সেটাই পরিচিতি লাভ করে কবিরহাট নামে।
সেনবাগ  উপজেলার নামকরণ ইতিহাস: বর্তমান সেনবাগ নামটি পূর্বের ‘নিজ সেনবাগ’-এর সংশোধিত ও পরিবর্তিত রূপ। ব্রিটিশ শাসনামলের পূর্বে ঐতিহাসিক নোয়াখালী জেলার অন্তর্গত বেগমগঞ্জ থানা আওতাভুক্ত ছিল এই ‘নিজ সেনবাগ’ জায়গাটি। কথিত আছে যে, বহু বছর পূর্বে এই এলাকায় ‘সেন’ বংশোদ্ভূত লোকজন বসবাস করত। তৎকালীন সময়ে এই এলাকায় তাদের প্রভাব প্রতিপত্তি ছিল অত্যন্ত প্রবল। তাদের প্রবল পরাক্রান্ত সাহসীকতাকে বাঘের সাথে তুলনা করা হতো। ফলে কালক্রমে এ এলাকা লোকমুখে ‘সেনবাগ’ নামে পরিচিতি লাভ করে।
চাটখিল  উপজেলার নামকরণ ইতিহাস: জনশ্রতি আছে  এখানকার বিলে চাটপোকার অবস্থানের জন্য স্থানীয় অধিবাসীরা হুমকির সম্মুখীন হয়েছিলেন। এ চাটপোকা থেকে কালক্রমে এলাকার নাম হয় চাটখিল।
সোনাইমুড়ি  উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:
প্রচলিত ধারণা হচ্ছে , এক সময় সোনাইমুড়ি কালিবাড়ী দেবালয়কে কেন্দ্র করে কালির হাট নামক বাজার প্রতিষ্ঠিত হয় । এটি তৎকালে নারিকেল, সুপারি ও পাটের জন্য বিখ্যাত ছিল । দেশের  শীর্ষ স্থানীয় জুট মিলের মালিকরা বাজার হতে পাট কিনত । পাটকে সোনালী আশঁ বলা হয় । এ বাজারের পাট সত্যিকার অর্থেই সোনার মত ছিল এবং এ এলাকার মাটি, মানুষের মনন ছিল সোনাই সমৃদ্ধ । অনেকে মনে করেন , এর জন্যই এ এলাকার নাম সোনাইমুড়ি হয়েছে ।

About Sabuj Vumi Editor

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Flag Counter