কুষ্টিয়া জেলার নামকরণ ইতিহাস:
কুষ্টিয়া নামকরণের সবচেয়ে সমর্থিত মতটি হেমিলটনস-এর গেজেটিয়ার সূত্রে পাওয়া। তাহলো, কুষ্টিয়াতে এক সময় প্রচুর পরিমাণে পাট উৎপাদিত হতো। পাটকে স্থানীয় ভাষায় ‘কোষ্টা’ বা ‘কুষ্টি’ বলতো, যার থেকে কুষ্টিয়া নামটি এসেছে। ‘কুষ্টিয়া’ নামটি কীভাবে এলো, তা নিয়ে ইতিহাসকারদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কারো মতে ফারসি শব্দ ‘কুশতহ’ থেকে কুষ্টিয়ার নামকরণ হয়েছে যার অর্থ ছাই দ্বীপ। আবার সম্রাট শাহজাহানের সময় কুষ্টি বন্দরকে কেন্দ্র করে কুষ্টিয়া শহরের উৎপত্তি বলেও একটি মত রয়েছে।
কুষ্টিয়া জেলার উপজেলা সমুহের নাম: সদর উপজেলা, কুমারখালী, খোকসা, মিরপুর, ভেড়ামারা, দৌলতপুর।
কুমারখালী উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:
কথিত আছে, নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ রাজস্ব সংগ্রহের জন্য কমরকুলি খাঁ-কে এই অঞ্চলের কালেক্টর নিযুক্ত করেন। তাঁর নামানুসারেই এই অঞ্চলের নাম হয় ‘কমরখালী’, যার অপভ্রষ্ট-রূপ বর্তমান ‘কুমারখালী’। দশম শতাব্দীর দিকে গড়াই নদীর নাম ছিল কুমার নদী। কুমার নদীর খাল থেকে ‘কুমারখালী’ নামের উৎপত্তি এই ধারণাও কেউ কেউ পোষণ করেন। অনেকের ধারণা কমর শাহ নামক একজন লোকের নাম থেকে কুমারখালী হয়েছে । যেহেতু নামটি প্রাচীন তাই মতভেদ থাকা স্বাভাবিক।
খোকসা উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:
যতদুর শোনা যায় খোকা শাহ নামের এক সাধকের নাম থেকে খোকসা নামের উৎপত্তি হয়েছে।কেউ মনে করেন, আঠার শতকের প্রথমার্ধে এই এলাকায় অনেক কলু (তেল উৎপাদনকারী) বাস করতো। স্থানীয় ভাষায় কলুদের ‘শাহ’ নামে অভিহিত করা হয়। কলু সম্প্রদায়ের এক প্রভাবশালী লোকের নাম ছিল খোকা শাহ। তার নামানুসারে এই এলাকার নাম হয় খোকাশাহ। এই খোকাশাহ নাম লোকমুখে সংক্ষিপ্ত হয়ে খোকসা রূপলাভ করেছে। উল্লেখ্য খোকসা উপজেলায় এখনও অনেক কলুর বসতি রয়েছে। আবার কারও কারও মতে খোকসা নামক গাছের থেকে খোকসা নামের উৎপত্তি। উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে প্রকাশিত পত্রিকা থেকে জানা যায়, গড়াই বিধৌত এই সমভূমিতে খোকসা নামক একপ্রকার গাছ জন্মাতো। এই গাছের বৈশিষ্ট্য ছিল অনবরত খোসা ছড়ানো। খোকসা গাছের নামানুসারে খোকসা নামের উৎপত্তি হয়েছে। তবে এ এলাকা থেকে এ গাছ অনেক আগেই বিলুপ্ত হলেও বর্তমান রংপুর অঞ্চলের কিছু কিছু এলাকায় খোকসা নামক গাছ এখনও আছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
। আরো পড়ুন: বাংলাদেশের ৬৪ জেলা উপজেলা সহ বিভিন্ন স্থানের নামের ইতিহাস
মিরপুর উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:
একসময় এ এলাকায় এক প্রসিদ্ধ মীর পরিবার বাস করতো। এই মীর পরিবারের পদবি থেকে এই এলাকার নাম মিরপুর হয়েছে বলে মনে করা হয়।
ভেড়ামার উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:
কোন এক কারণে এখানে প্রচুর সংখ্যাক ভেড়া মারা পড়ে এ থেকে এ এলাকা ভেড়ামাড়া নামে পরিচিত হয়। তবে গ্রহণযোগ্য কিংবদন্তী রয়েছে এই এলাকা একসময় জঙ্গলাকীর্ণ ছিল। একদা এক বাঘ জঙ্গল থেকে বের হয় একটি ভেড়াকে আক্রমন করে। নিকটবর্তী লোকজন এই দৃশ্য দেখে জোরে চিৎকার করতে থাকে। লোকজনের চিৎকার শুনে কিছু স্ংখ্যাক ইংরেজ বের হয়ে আসে। লোকজনকে চিৎকারের কারন জানতে চাইলে তারা জানায় একটি বাঘ একটি ভেড়া মেরে ফেলেছে। কালক্রমে এই ভেড়া ও মারা শব্দ দুটি লোকমুখে প্রচারিত হতে হতে এলাকার নাম হয়ে যায় ভেড়ামারা।
দৌলতপুর উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:
এই এলাকার নামকরণ নিয়ে বিভিন্ন মত প্রচলিত আছে, তবে সবচেয়ে জনপ্রিয় মত হচ্ছে, স্থানীয় প্রভাবশালী ও সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি দৌলতখানের নামানুসারে এলাকার নাম হয় দৌলতপুর। অন্যমতে, দৌলত শব্দের বাংলা অর্থ সম্পদ এ থেকেও এলাকার নাম দৌলতপুর হতে পারে।
তথ্যসুত্র: জেলা তথ্য বাতায়ন, সুফি ফারুক, কুষ্টিয়াবার্তা, ঐতিহাসিক বইপত্র।