ইংরেজি ১২ মাস ও ইংরেজি ৭ দিনের নামকরণ ইতিহাস

ইংরেজি মাসের নামকরণ ইতিহাসঃ

রোমান দেবতা জেনাস। দুই মুখ দিয়ে   সামনে ও পিছনে দেখতে পান। 

January (জানুয়ারি) মাসের নামকরণ:
রোমে ‘জানুস’ বা জেনাস নামক এক দেবতা ছিল। রোমবাসী তাকে সূচনার দেবতা বলে মানত। যে কোন কিছু করার আগে তারা এ দেবতার নাম স্মরণ করত। তাই বছরের প্রথম নামটিও তার নামে রাখা হয়েছে। রোমান দেবতা জেনাস। দুই মুখ দিয়ে তিনি সামনে ও পিছনে দেখতে পান।  দুটি মুখ দিয়ে জেনাস পুরনো ও নতুন বছর দেখতে পাবেন, এই ছিল ধারণা। খ্রিস্টজন্মের প্রায় ৬৯০ বছর আগে সম্রাট নুমো পম্পিলিস জানুয়ারি মাসকে বছর শুরুর প্রথম মাস হিসেবে ঘোষণা করেন।

রোমান দেবতা ‘ফেব্রুস এর ভাস্কর্য

February (ফেব্রুয়ারি) মাসের নামকরণ: প্রাচীন রোমানরা ফ্রেরুয়া নামে একটি ‘শুদ্ধিকরণ উৎসব’  করতেন। উৎসবে ছাগলের চামড়া দিয়ে তৈরি চাবুক ‘ফ্রেব্রুয়া’ দিয়ে নিঃসন্তান মহিলাদের অত্যাচার করা হত। মনে করা হত, এর ফলে তাঁরা পবিত্র হয়ে সন্তানের জন্ম দেবেন। সম্রাট পম্পিলিস এই উৎসবের জন্য মাসের নাম রাখেন ফ্রেব্রুয়ারি। কেউ মনে করেন রোমান দেবতা ‘ফেব্রুস’-এর নাম অনুসারে ফেব্রুয়ারি মাসের নামকরণ করা হয়েছে।

রোমান যুদ্ধের দেবতা ‘মার্স’ ভাষ্কর্য

March (মার্চ) মাসের নামকরণ:
রোমান যুদ্ধের দেবতা ‘মার্স’ কে শ্রদ্ধা জানাতে তাঁর নাম অনুসারে এই মাসের নামকরণ। প্রাচীন রোমানরা বিপক্ষকে বাধ্য করতেন যাতে সমস্ত যুদ্ধ মার্চ মাসে বন্ধ থাকে। এর কারণ, সেই সময় মার্চ ছিল নতুন বছরের প্রথম মাস ও উৎসবের মাস। মার্স রোম এবং রোমান জীবনধারার একজন রক্ষক ছিলেন। তিনি শহরের সীমানা এবং সীমান্ত রক্ষা দায়িত্ব পালন করতেন। যুদ্ধের সাথে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ উৎসব তার সম্মানে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং দেবতা নেকড়ে এবং কাঠঠোকরার সাথেও ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন।
April (এপ্রিল) মাসের নামকরণ:
কেউ কেউ ধারণা করেন ল্যাটিন শব্দ ‘এপিরিবি’ (যার অর্থ খুলে দেয়া) হতে এপ্রিল এসেছে। ল্যাটিন শব্দ ‘এপ্রিল’ এর মানে ‘দ্বিতীয়’ কারণ সেই সময়ের রোমান ক্যালেন্ডারে এপ্রিল ছিল দ্বিতীয় মাস। অন্য তত্ত্ব বলছে, ল্যাটিন শব্দ ‘এপেরিরে’ থেকে এপ্রিল মাসের নামকরণ হয়েছে। আবার অনেকে বলেন, গ্রিক দেবী ‘এফ্রোডাইট’ থেকে এই মাসের নামকরণ হয়েছে। অ্যাফ্রোডাইট ছিলেন প্রেমের দেবী। গ্রিকরা সংক্ষেপে তাকে ‘অ্যাফ্রো’ নামে ডাকত। এপ্রিল মাসের নাম হয়েছে অ্যাফ্রো দেবীর নামানুসারে।
May (মে) মাসের নামকরণ:
মে মাসের নামকরণের পিছনে আছে আরেক দেবী যার নাম ‘মাইয়া’ (মতান্তরে মেইয়া)। প্রাচীন রোমানদের বিশ্বাস ছিল, দেবদেবীর মধ্যে কখন কোন দেবতা পৃথিবীতে নামবেন, তা নাকি দেবী ‘মাইয়া’ ঠিক করে থাকেন। মেইয়া রোমানদের আলোকে দেবী।

June (জুন) মাসের নামকরণ:

 
রোমানদের নারী, চাঁদ ও শিকারের দেবী ছিলেন ‘জুনো’। প্রাচীন রোমানদের কাছে জুন মাস ছিল বিয়ের মাস। এই মাসের নামকরণের পিছনে আছেন রোমানদেবী ‘জুনো’। ইনি ছিলেন দেবতাদের রানী। জুনো দেবীর নাম থেকে জুন মাসের নামকরণ। রোমান দেবী জুনো (গ্রিক হেরা অ্যানালগ) নভোমন্ডল ও (লেডি বিদ্যুত সহ) বায়ুমণ্ডলের রাণী, সেইসাথে বিয়ে ও মাতৃত্ব পৃষ্ঠপোষিকা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। উল্লেখযোগ্য যে জুনো পিতৃতান্ত্রিক সমাজের মধ্যে নারীত্বের প্রতীক ছিল। 

July (জুলাই) মাসের নামকরণ:
জুলিয়াস সিজারের নামানুসারে জুলাই মাসের নামকরণ। মজার ব্যাপার হচ্ছে- বছরের প্রথমে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিকে স্থান দিয়ে তিনি নিজেই নিজেদে দূরে সরিয়ে দেন। এই জুলাই মাসেই সিজার জন্মেছিলেন। সেই সময় অবশ্য এই মাসের নাম ছিল ‘কুইন্টিলিস’। “এলাম দেখলাম জয় করলাম”এটি ছিলো জুলিয়াসের বানী। জুলিয়াস সিজার ছিলেন রোম সাম্রাজ্যের একজন সেনাপতি এবং একনায়ক; এছাড়া লাতিন ভাষায় রচিত তার লেখা গদ্যসাহিত্যও উল্লেখের দাবি রাখে। তাঁকে ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মধ্যে একজন বলে বিবেচনা করা হয়। যে সমস্ত ঘটনার ফলে তার সমসাময়িক ও ঠিক তার পরবর্তী যুগে রোমের প্রশাসনিক চরিত্রে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয় ও রোম একটি গণতন্ত্র থেকে একটি একনায়ককেন্দ্রিক সাম্রাজ্যে পরিণত হয়, সেইসমস্ত ঘটনায় জুলিয়াস সিজারের ভূমিকা ছিল যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য।

August  (আগস্ট) মাসের নামকরণ:

জুলিয়াস সিজারের মৃত্যুর পর তার ভাগ্নির ছেলে অক্টাভিয়াস রোম সাম্রাজ্যেরপশ্চিমাংশ ও মার্ক অ্যান্টনি সাম্রাজ্যের পূর্বাংশ কন্সল হিসাবে শাসন করতে থাকেন। অ্যান্টনির মৃত্যুর পর অক্টাভিয়াস এককভাবে রোম সাম্রাজ্যের অধীশ্বর হন। অক্টাভিয়াস প্রথমে কন্সল হিসাবে দেশ শাসন করতেন এবং প্রতি বছরই তিনি এ পদে নির্বাচিত হতেন।কিন্তু খ্রিস্টপূর্ব ২৭ অব্দে সিনেট তাকে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী করে এবং অগস্টাস  বা মহিমান্বিত উপাধি দান করে। অর্থাৎ তিনি চিরজীবনের জন্য কন্সাল মনোনীত হন।অক্টাভিয়াস নিজে উপাধি হিসাবে ব্যবহার করতেন ইম্পেরেটর সিজার অগস্টাস। ইম্পেরেটর মানে হচ্ছে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। রোমান সম্রাট অগাস্টাসের নাম আগস্ট মাসের নামকরণ হয়েছে অনুসারে

September (সেপ্টেম্বর) মাসের নামকরণ:

ল্যাটিন ‘সেপ্টেম’ মানে সাত। রোমান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সেপ্টেম্বর ছিল সপ্তম মাস। খ্রিস্টপূর্ব ৪৫ সালে যখন জুলিয়াস সিজার তার নাম অনুসারে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার শুরু করলেন, সেখানে ক্রম অনুসারে প্রথম ছয়টা মাস ঠিক একই থেকে গেল। কিন্তু নতুন দুটো মাস জানুয়ারি ও ফ্রেব্রুয়ারি অতিরিক্ত যোগ হওয়ায় সেপ্টেম্বর হয়ে গেল নয় নম্বর মাস। তারপর এটা কেউ পরিবর্তন করেনি।

October (অক্টোবর) মাসের নামকরণ:
‘অক্টোবরের’ শাব্দিক অর্থ বছরের অষ্টম মাস। ল্যাটিন ‘অক্টো’ মানে আট আর ‘বার’ শব্দটি বিশেষণ হয়ে সাফিক্স হিসেবে ব্যবহার হয়েছে। অক্টো শব্দটির অর্থ অষ্টম কিন্তু জুলিয়ান এবং গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে অক্টোবর হচ্ছে দশম মাস।
November (নভেম্বর) মাসের নামকরণ:
‘নভেম’ শব্দের অর্থ নয়। সেই অর্থানুযায়ী তখন নভেম্বর ছিল নবম মাস। জুলিয়াস সিজারের কারণে আজ নভেম্বরের স্থান এগারতে। একই ভাবে নভেম্বর মাস এল ‘নভেন’ যার মানে নবম থেকে। বাস্তবে নভেম্বর মাস ১১তম মাস।

Decembe (ডিসেম্বর): মাসের নামকরণ:
ল্যাটিন শব্দ ‘ডিসেম’ অর্থ দশম। সিজারের বর্ষ পরিবর্তনের আগে অর্থানুযায়ী এটি ছিল দশম মাস। কিন্তু আজ আমাদের কাছে এ মাসের অবস্থান ক্যালেন্ডারের শেষ প্রান্তে।

আরো দেখুন:  ইংরেজি নববর্ষ, সাল ও ক্যালেন্ডার এর ইতিহাস

ইংরেজি সাতদিনের নামকরণ ইতিহাস: 

শনিবার (Saturday): Saturn হলেন রোমান দেবতা। রোমান সাম্রাজ্যের আমলের লোকেরা এই বলে বিশ্বাস করত যে, চাষাবাদের জন্যও আবহাওয়া ভালো খারাপ করার ‘স্যাটান’ দেবতা । এ দেবতাকে সম্মান করার জন্যই তার নামে একটি গ্রহের সাথে সপ্তাহের একটি দিনের নাম স্যাটনি ডেইজ রাখা হয়ে। যার অর্থ হচ্ছে স্যাটানের দিন। বর্তমানে তা ‘স্যাটারডে’ নামেই পরিচিত।
 
রবিবার (Sunday): গ্রিক পুরাণে সূর্য হচ্ছে দেবতা, আর স্যাক্সন ভাষায় তাকেই বলে হয় Sunne যা থেকে ইংরেজিতে এসেছে Sun। সান মানে সূর্য।  বাংলায় রবি মানেও সেই সূয্যিমামাই। সেই থেকে সানডে । আবার দক্ষিণ ইউরোপের সাধারণ লোকেরা বিশ্বাস করত এবং ভাবত যে, একজন দেবতা রয়েছেন যিনি শুধুমাত্র আকাশে গোলাকার আলোর বল অংকন করেন। ল্যাটিন ভাষায় যাকে বলা হয় ‘সলিছ’। এর থেকেই সলিছ ডে অর্থাৎ সূর্যের দিন। উত্তর ইউরোপের লোকেরা এই দেবতাকে ডাকত ‘স্যানেল ডেইজ’ নামে। যা পরবর্তীতে বর্তমান সান ডে-তে রূপান্তরিত হয়।
 
সোমবার (Monday):   মানডে আসলে ছিল মুনডে। গ্রিক পুরাণে Seleness চাঁদের দেবী। রোমান ভাষায় চাঁদকে বলা হয় Moon। এখান থেকে হলো মানডে! আবার দক্ষিণ ইউরোপের লোকেরা রাতের বেলায় আকাশের গায়ে রূপালী বল দেখে তারা ডাকত ‘লুনা’ নামে। ল্যাটিন শব্দ লুনা ডেইস। উত্তর ইউরোপের লোকেরা ডাকত মোনান ডেইজ। মোনান ডেজ থেকে রূপান্তর হয় এ মানডে ।
মঙ্গলবার (Tuesday): 

গ্রিক পুরাণে Ares নামে এক দেবতা আছেন। রোমান ভাষায় তাকে বলা হয় Mars. Mars মানে মঙ্গলগ্রহ। কিন্তু স্যাক্সনদের ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী তাদের দেবতা হলেন Tiu। সেখান থেকেই ইংরেজি Tuesday মানে মঙ্গলবার। রোমান রাজ্যের লোকেরা বিশ্বাস করত যে, টিউ দেবতা আছেন যুদ্ধ দেখাশুনা করেন। তারা ভাবত যারা টিউকে আশা করত, টিউ তাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করত যুদ্ধের ময়দানে এবং যারা পরলোক গমন করেছে তাদেরকে টিউ পাহাড় থেকে নেমে একদল মহিলা কর্মী নিয়ে বিশ্রামের জায়গা ঠিক করত। তারা একে ডাকত ‘ডুইস’ নামে। যার ইংরেজি অর্থ টুইস ডে।

বুধবার (Wednesday):  রোমান পুরাণ বলে, ব্যবসা-বাণিজ্যের দেবতা হচ্ছেন Mercury। আর এই মার্কারি হলো বুধ গ্রহ। তবে স্যাক্সনদের দেবী Woden এর নাম থেকে এসেছে Woden’s Day আর সেখান থেকে Wednesday। দেবতাদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ‘উডেন’ বলে দক্ষিণ ইউরোপের লোকেরা ভাবত। তিনি সারা দিন ঘুরে জ্ঞান লাভ করতেন যার জন্য তার একটি চোখ হারাতে হয়েছিল। এই হারানো চোখকে তিনি সবসময় লম্বাটুপি দিয়ে আবৃত করে রাখতেন। দুটো পাখি উডেনের গোয়েন্দা হিসেবে কাজ করত, তারা উডেনের কাঁধে বসে থাকত। রাতে তারা সারা পৃথিবীর ঘটনাবলি উডেনকে শুনাত। এভাবেই উডেন সারা পৃথিবীর খবর শুনতে সক্ষম হন। এজন্য লোকেরা নাম রাখল ওয়েডনেস ডেইস। যা বর্তমান ওয়েডনেস ডে নামে পরিচিত।
বৃহস্পতিবার (Thursday):  বজ্রপাত ও বিদ্যুৎ চমকানোর সম্পর্ক না জানার ফলে মানুষ মনে করত যে, বজ্রপাত ও বিদ্যুৎ চমকানোর জন্য একজন দেবতা দায়ী। তারা শুধু আলো জ্বলতে ও বিদ্যুৎ চমকাতে দেখত। তারা দেবতার নাম রাখে ‘থর’। তাদের মধ্যে এই অন্ধ বিশ্বাস ছিল যে, দেবতা থর যখন রাগান্বিত হন তখন তিনি রাগে আকাশে একটা হাতুড়ি নিক্ষেপ করেন দু’টি ছাগলের গাড়িতে বসে। ছাগলের গাড়ি চাকার শব্দ হচ্ছে বজ্রপাত ও হাতুড়ির আঘাত হচ্ছে বিদ্যুৎ চমকানো। থরের প্রতি সম্মান রক্ষার্থে তারা সপ্তাহের একটি দিনের নাম রাখেন থার্স ডেইস। যাকে আজ আমরা থার্স ডে বা বৃহস্পতিবার বলে ডাকি।
শুক্রবার (Friday):  ওডিন একজন শক্তিশালী দেবতা। তার স্ত্রী দেবী ফ্রিগ ছিলেন ভদ্র এবং সুন্দরী। ওডিনের পাশে সব সময় তার স্ত্রী থাকতেন। পৃথিবীকে দেখতেন, প্রকৃতিকে উপভোগ করতেন, প্রকৃতির দেবী ভালোবাসা ও বিবাহের দেবীও ছিলেন ফ্রিগ। এই জন্য লোকেরা বাকি একটি দিনের নাম ‘ফ্রিগ ডেইজ’ ফ্রিগ ডেইজ থেকে ফ্রাইডে রাখেন।

About Sabuj Vumi Editor

Check Also

সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন স্থানের নামকরন ইতিহাস

সাতক্ষীরা জেলার নামকরন ইতিহাস : সাতক্ষীরা জেলার নামকরণ প্রসঙ্গে কয়েকটি মত প্রচলিত আছে । এর …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *