Home / নামের ইতিহাস ও কিংবদন্তী / ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিভিন্ন স্থানের নামকরণ ইতিহাস

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিভিন্ন স্থানের নামকরণ ইতিহাস

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নামকরণ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নামকরণ নিয়ে একাধিক মত প্রচলিত আছে। এস এম শাহনূর সম্পাদিত নামকরণের ইতিকথা থেকে জানা যায় যে সেন বংশের রাজত্ব্যকালে এই অঞ্চলে অভিজাত ব্রাহ্মণকুলের বড়ই অভাব ছিল। যার ফলে এ অঞ্চলে পূজা অর্চনার জন্য বিঘ্নতর সৃষ্টি হতো। এ সমস্যা নিরসনের জন্য সেন বংশের শেষ রাজা রাজা লক্ষণ সেন আদিসুর কন্যকুঞ্জ থেকে কয়েকটি ব্রাহ্মণ পরিবারকে এ অঞ্চলে নিয়ে আসেন।  তাদের মধ্যে কিছু ব্রাহ্মণ পরিবার শহরের মৌলভী পাড়ায় বাড়ী তৈরী করে। সেই ব্রাহ্মণদের বাড়ির অবস্থানের কারণে এ জেলার নামকরণ ব্রাহ্মণবাড়িয়া হয় বলে অনেকে বিশ্বাস করেন। অন্য একটি মতানুসারে দিল্লী থেকে আগত ইসলাম ধর্ম প্রচারক শাহ সুফী হযরত কাজী মাহমুদ শাহ এ শহর থেকে উল্লেখিত ব্রাহ্মণ পরিবার সমূহকে বেরিয়ে যাবার নির্দেশ প্রদান করেন, যা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নামের উৎপত্তি হয়েছে বলে মনে করা হয়।  ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আঞ্চলিক উচ্চারণ ‘বাউনবাইরা’ । ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিকৃত নাম ‘বি-বাড়িয়া’ বহুল প্রচলিত ।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার উপজেলা সমুহঃ  ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, কসবা, নাসিরনগর, সরাইল উপজেলা, আশুগঞ্জ, আখাউড়া, নবীনগর, বাঞ্ছারামপুর, বিজয়নগর।

কসবা উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:

কসবা ফরাসী শব্দ। কসবা শব্দটির অর্থ উপশহর বা জনপদ। ভারতবর্ষে মুসলমান শাসনামলে ১৩৩৮ খিস্ট্রাব্দে আলাউদ্দিন হোসেন শাহ রেল স্টেশনের পশ্চিম পাশে কৈলাঘর নামে একটি দূর্গ নির্মাণ করেছিলেন। ঐ দূর্গের আশে পাশে প্রথম দিকে জনবসতি এবং পরবর্তীতে আস্তে আস্তে ছোট শহর কসবা গড়ে ওঠে।  সেজন্য কৈলাগড় থেকে কসবার উৎপত্তি। রেল স্টেশনের পশ্চিম পাশে কৈলাগড় দূর্গের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়।

নাসিরনগর উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:

কিংবদন্তি হযরত শাহজালাল (রহঃ) এবং  তার একজন সহযোদ্ধা নাসিরউদ্দীন সিলেট যাত্রাপথে এই স্থানে কিছুদিন অবস্থান করেন। এই যোদ্ধা নাসিরউদ্দীনের নামানুসারে এই অঞ্চলের নাম হয় নাসিরনগর।

সরাইল উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:

সরাইখানা শব্দের অর্থ ক্ষণস্থায়ী বাসস্থান।  ফার্সী ঈল শব্দের অর্থ বিদ্রোহী বন্ধু।  সরাই+ঈল= সরাইল  অর্থাৎ  বিদ্রোহী  বন্ধুর বাসস্থান ফখরুদ্দিন বাহরাম খানের  শিলহদর(বর্মরক্ষক) অর্থাৎ দেহরক্ষী হিসেবে বিদ্রোহী হয়ে তিনি যে স্থানে  সামরিক প্রস্ত্ততির জন্য ক্ষণস্থায়ী রাজধানী করেছিলেন, সেই স্থানটি দিল্লীর সুলতান  ও তাঁর সভাসদগণ, স্থপতিগণ  কর্তৃক সরাই+ঈল= সরাইল নামে আখ্যায়িত হয়েছিল।

আশুগঞ্জ উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:

আজকের বিখ্যাত আশুগঞ্জের প্রতিষ্ঠা হয় প্রায় একশত বছর পূর্বে সবুজ শ্যামল পাখি ডাকা ছায়া সুনিবিড় মেঘনা পাড়ে  আশুগঞ্জ মূলত চরচারতলা, আড়াইসিধা, যাত্রাপুর, বড়তল্লা, সোনারামপুর, তালশহর, সোহাগপুর, বাহাদুরপুর গ্রামকে ঘিরেই ১৮৯৮ খ্রিঃ গোড়াপত্তন হয় আশুগঞ্জ প্রতিষ্ঠার পূর্বে এলাকার জনগন ভৈরব বাজারে গিয়েই তাদের দৈনন্দিন কেনাবেচা করত।  ভৈরবের সপ্তাহিক হাট ছিল প্রতি বুধবার ভৈরব বাজারের তদানীন্তন মালিক ভৈরব বাবু  কর্তৃক আরোপিত  করভারে মেঘনার পূর্ব পাড়ের ক্রেতা ক্রেতারা অতিষ্ট  হয়ে মেঘনার পূর্ব পাড়ে  সৈকতের বালিকণা তথা  সোনারামপুর  মাঠের  উপর  হাট বসিয়ে নেয়।  প্রতি বুধবারে নদী সেকতের চিকচিক বালিকণার উপর হাট বসেই চললো।  তখন  অত্র এলাকা সরাইল পরগনার জমিদারের অধীন ছিল। তখনকার সরাইল এর জমিদার ছিলেন মহারাজ আশুতোষনাথ। অত্র এলাকার জনগণ রাজা আশোতোষ নাথ এর আর্শীবাদ পাওয়ার জন্য রাজা আশোতোষ নাথ এর নামের সাথে  গঞ্জ  যোগ করে দিয়ে এর নাম করণ করা হয় আশুগঞ্জ।

আখাউড়া উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:

এ এলাকাটি এক সময় ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। সে সময়ে ত্রিপুরা রাজ্যের মহারাজা রাধাকৃষ্ণ মাণিক্য এই এলাকায় (রাধানগর গ্রামে) একটি রাধাকৃষ্ণের মন্দির স্থাপন করেন, যা স্থানীয় লোকজনের নিকট আখড়া নামে পরিচিত ছিল। কালক্রমে ভাষার বিকৃতি ঘটে আখড়া আখাউড়ায় রুপান্তর হয়।

নবীনগর উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:

কথিত আছে, অতীতে এই অঞ্চল নদীগর্ভে বিলীন ছিল। পরবর্তীতে পলি জমে এখানে চর পড়ে। কিছু সংখ্যক লোক এখানে এসে বসতি স্থাপনের জন্য নতুন নতুন ঘর (অর্থাৎ নবীন ঘর) নির্মাণ করে। এই নবীন ঘরই কালক্রমে পরিবর্তিত হয়ে বর্তমানের নবীনগর নামের উৎপত্তি। আবার বলা হয়, সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান এই চরে প্রথমে বসতি স্থাপন করলে তারা নবী হযরত মুহম্মদ (সাঃ) এর পবিত্র নামানুসারে এই জনপদের নাম রাখেন নবীনগর।

নবী নগর উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:

নবীনগর নামকরণ নিয়ে একাধিক মত  রয়েছে। কারো মতে “নবীন গড়” থেকেই নবীনগর নামের উৎপত্তি।  আবার অনেকের ধারনা ইসলাম ধর্মের নবীনর নামের “নবী” ও “নগর” দুটি শব্দের সম্নবয়ে নবীনগর নামকরণ হয়েছে।

বাঞ্ছারামপুর উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:

জনশ্রুতি আছে, ঢাকার তৎকালীন জমিদার রূপলাল বাবুর একজন বিশ্বস্ত রায়ত বাঞ্ছারাম দাস বর্তমান উপজেলা সদরে বাস করতেন। তার আচার-ব্যবহার এবং কাজকর্মের বিশ্বস্ততা ও আনুগত্যের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে তার নামে এই অঞ্চলের নামকরণ করা হয় বাঞ্ছারামপুর।

বিজয়নগর উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:

বিজয়নগর উপজেলা নামকরণ সম্পর্কে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

About Sabuj Vumi Editor

Check Also

ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন স্থানের নামকরণ ইতিহাস

ঝিনাইদহ জেলার নামকরণ ইতিহাস: জনশ্রুতি আছে প্রাচীনকালে বর্তমান ঝিনাইদহের উত্তর পশ্চিম দিকে নবগঙ্গাঁ নদীর ধারে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Flag Counter