Home / নামের ইতিহাস ও কিংবদন্তী /  নারায়নগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানের নামকরণের ইতিহাস

 নারায়নগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানের নামকরণের ইতিহাস

নারায়নগঞ্জ জেলার  নামকরণের ইতিহাস:

৭৬৬ সালে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা বিকন লাল পান্ডে (বেণুর ঠাকুর বা লক্ষীনারায়ণ ঠাকুর নামে ও পরিচিত) ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নিকট থেকে এ অঞ্চলের মালিকানা গ্রহণ করেন। তিনি প্রভু নারায়ণের সেবার ব্যয়ভার বহনের জন্য একটি দলিলের মাধ্যমে শীতলক্ষা নদীর তীরে অবস্থিত মার্কেটকে দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করেন। তাই পরবর্তীকালে এ স্থানের নাম হয় নারায়ণগঞ্জ।

রুপগঞ্জ উপজেলা নামকরণের ইতিহাস:

রূপগঞ্জ নামের সঠিক ইতিহাস পাওয়া যায় না। অনুসন্ধানে ভিন্নি ভিন্ন মত পাওয়া গেছে। কথিত আছে রূপবাবু নামে এ এলাকায় একজন প্রভাবশালী জমিদার ছিলেন যার নামানুসারে রূপগঞ্জের নামকরণ করা হয়েছে।

আড়াইহাজার  উপজেলা নামকরণের ইতিহাস:

বহু দিনের আগের ঘটনা। তখন দিল্লির বাদশাহ ছিল মহামতি সম্রাট আকবর। কী হিন্দু কী মুসলমান  সেই সময়ে ভারতের ধন সম্পদের দিক দিয়েও তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ পরিপূর্ণ। এমনকি রাজ্য পরিচালনার দিক থেকে ও তিনি খুব পারদর্শিক ছিলেন। সম্রাট আকবর হিন্দু মুসলমান সবাইকে খুব ভালবাসতেন। যে কারণে তিনি হয়তো চেয়েছিলেন দু’জাতির একিত্রকরন। অর্থ্যাৎ Òদিন-ই এলাহী”নামক এক নতুন ধর্ম প্রচারে লিপ্ত হয়েছিলন। রাজ্য শাসন ক্ষমতার দিক দিয়ে তৎকালীন ভারতের রাজপুতানারা ছিলেন খুব প্রভাবশালী ও প্রতাবশালী। এমনকি শক্তি সাহসে ও ওরা ছিলো পরিপূর্ণ।  এই রাজপুতানারা কখনো কারো কাছে হার মানতেন না বা পরাজিত হতে চাইতেন না। এমনকি কারো কাছে বৎসতা স্বীকার ও করতেন না। মহাজ্ঞানী মহামতী সম্রাট আকবর একদিন ভাবতে লাগলেন কী করে কেমন করে সেই প্রভাবশালী ও প্রতাবশালী রাজপুতানাদের তার অধীনে আনা যায়। কারণ সম্রাট আকবর খুবই বুদ্ধিদীপ্ত ব্যক্তি ছিলেন। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন সবার আগে মহারাজা মানসিংহকে তার অধীনে আনার। সেই লক্ষ্যে মনের ইচ্ছাকে পূর্ণ করার জন্য সততা ও সুকৌশলে মহামতী আকবর মহারাজা মানসিংহের আপন ফুফুকে বিয়ে করার ইচ্ছায় মানসিংহকে সম্রাট আকবরের প্রধান সেনাপতি করার প্রস্তাব দিলেন। যাকে বলে একঢিলে দুই পাখি শিকারের মতো। সম্রাট আকবর তার বৃদ্ধিতে সার্থক হলেন। তখন থেকেই রাজা মানসিংহ সম্রাটের প্রধান সেনাপতি তো হলেনই অপরদিকে তার আপন আত্মীয় ও হয়ে গেলেন। তার এই বুদ্ধিদীপ্ততার গুণে পর্যায়ক্রমে একদিন সমগ্র রাজপুতানা সম্রাট আকবরের অধীনে এসে গেলো। এবার সম্রাটের দৃষ্টি নিবন্ধিত হলো বাংলাদেশের উপর। তখন বাংলাদেশ বার ভূইয়া ও ঈসাখাঁর প্রভাব প্রতিপত্তি বিরাজ করছিলো। একদিকে সম্রাট আকবর বার ভূইয়াকে পরাস্থ করে সমগ্র বাংলাদেশ দিল্লীর সিংহাসনের অধীনে আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করলেন। সেই লক্ষ্যে তিনি একদিন সেনাপতি মানসিংহকে সৈন্য সামন্ত সাথে নিয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়ে ছিলেন। তখন যশোরের প্রতাপতিত্ব, বাওয়ালের ফজল গাজী, ফরিদপুরের কন্দ্রপ রায়, বিক্রমপুরের চাঁদ রায়, কেদার রায়, সোনারগাঁয়ের ঈশাখাঁ অর্থ্যাৎ বিশেষ করে তাদের উপর ছিল বাংলার শাসন ক্ষমতা। সেনাপতি মানসিংহ বাংলাদেশে এসেই সর্ব প্রথম বাংলার বার ভূইয়াদের পরাস্থ করে সমস্ত সৈন্য সামন্ত নিয়ে সোনারগাঁয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। এদিকে ক্ষমতাধর, শক্তিধর ঈসাখাঁ সেই সংবাদ পেয়ে সেনাপতি মানসিংহকে বাধাঁ প্রদান করার উদ্দেশ্য সৈন্য নিয়ে শীতলক্ষা নদী পাড় হয়ে ইউসুফগঞ্জ নামক স্থানে এসে উপস্থিত হলে সেখানেই ঈসাখাঁর সৈন্য মানসিংহকে বাধা প্রদান করলেন। প্রথমে উভয়ের মধ্যে আলপ-পিরচয় হলো। অবশেষে সিদ্ধান্ত হলো উভয়ের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হবে। কেউ কারো কাছে বিনা যুদ্ধে বৎসতা স্বীকার করতে সম্মত হলেন না। তাই উভয়ের স্বগৌরবে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হলেন। যুদ্ধের এক পর্যায়ে হঠাৎ মানসিংহের হাত থেকে শানিত তরবারি মাটিতে পরে গেল। বীরবল ঈসাখাঁ পরাজিত মানসিংহের বুকে তরবারি তাক করে ঘোষণা দিয়ে বললেন মানসিংহ এখন আপনি আমার কাছে পরাজিত। তাতে তিনি প্রতি উত্তর না করে নীরব রইলেন। তবুও ঈসাখাঁ যুদ্ধ সমাপ্ত করলেন না। তিনি তার সাহস ও বীরত্ব দেখানোর জন্য পরাজিত মানসিংহের হাতে আবার একটি তরবারি তুলে দিয়ে বললেন, আপনার সাথে আমার আরেকবার শক্তি পরীক্ষা হবে এবং আপনি আমাকে আগে আক্রম করবেন। সেনাপতি মানসিংহ ঈসাখাঁর এমন শক্তি ক্ষমতা, উদারতা ও মহানুভবতার পরিচয় পেয়ে অবাক হয়ে উত্তর দিলেন, না না, আর আপনার সাথে যুদ্ধ করবে না। আমি স্বানন্দো আপনার কাছে পরাজয় মেনে নিলাম এবং আপনার সাথে আমার আর যুদ্ধ নয়, হবে বন্ধুত্ব। ঈসাখাঁর সাথে মানসিংহ সন্ধি করে তাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করলেন। এ সময় মানসিংহ ঈসাখাঁকে আবার বললেন , বন্ধু আপনাকে আমার সাথে দিল্লীর সম্রাটের দরবারে যেতে হবে। সেখানে গিয়ে আপনি নিজের মুখ দিয়ে মহামান্য সম্রাট আকবরকে বলবেন যে আপনি আমাকে পরাজিত করেছেন। তখন ঈসাখাঁ মানসিংহকে বললেন, ঠিক আছে তাই হবে বন্ধু। কিন্তু আগে আমার একটি কথা রাখতে হবে। দিল্লী রওয়ানা হওয়ার আগে আমার বাংলার রাজধানী সোনারগাঁয়ে বেড়াতে যেতে হবে। মানসিংহ ঈসাখাঁর নিমন্ত্রন গ্রহণ করে সোনারগাঁ অভিমুকে রওয়ানা হলেন। তারপর দিল্লীর গিয়ে সম্রাটের সামনে হাজির হয়ে সেনাপতি মানসিংহ ঈসাখাঁর পরিচয় তুলে ধরে তার শক্তি সাহস আর উদারতার কথা প্রকাশ করতে গিয়ে ঘটনাটা খুলে বললেন। ঈসাখাঁর সাথে সম্রাটের আলাপ-পরিচয়ের পর রাজ মেহমানখানায় বিশ্রাম করতে তাদের পাঠিয়ে দিলেন। সম্রাট আকবর মানসিংহকে বললেন, এখন ঈসাখাঁকে তুমি কি করতে চাও তাই করতে পার। এই মহা আদেশ পেয়ে মানসিংহ ঈসাখাঁকে বললেন, বন্ধু আপনি আজ থেকে স্বাধীন ছিলেন স্বাধীনই থাকবেন। আপনাকে দিল্লীর সম্রাটের দরবারে কোন প্রকার কর দিতে হবে না। শুধু আপনার পক্ষ থেকে আড়াইহাজার সৈন্যর রসদ প্রদান করতে হবে। তারপর ঈসাখাঁ দিল্লীর সম্রাটের দরবার থেক বিদায় নিয়ে সোনারগাঁয়ের নিজ রাজধানীতে ফিরে আসলেন। ঈসাখাঁর বাংলাদেশে ফিরে আসার সময় মানসিংহ তার সাথে কিছু রাজকর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ বাংলাদেশে রেখে যাওয়া সর্বমোট আড়াইহাজার সৈন্যের ভরণ পোষণের দায়িত্ব দিয়ে বললেন, আপনি শুধু এই আড়াইহাজার সৈন্যের রসদ দিয়ে দিবেন। দিল্লীর সম্রাট আকবরের নির্দেশ মোতাবেক ঈসাখাঁ সেই আড়াইহাজার সৈন্যের রসদ দিতেন এবং থাকার জন্য তাদেরকে আড়াইহাজারে স্থান করে দেয়া হয়েছিলো বলে সেদিন থেকেই জায়গাটির নামকরণ করা হয়েছিল আড়াইহাজার।

বন্দর উপজেলা নামকরণের ইতিহাস:

ঐতিহাসিক মিঃ হলওয়েল ও মিঃ জেমস টেলার এবং আধুনিককালে আহম্মদ হাসান দানী এর মতে শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্বতীরের বন্দরই ছিল সে সময়ের শাহ বন্দর। এতদাঞ্চলে বিভিন্ন ব্যবসার প্রসার ঘটায় এলাকাটি নদী বন্দর হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হওয়ার কারণে প্রাচীন শাহ বন্দরের নামানুসারে এলাকাটির নাম বন্দর হিসাবে দেশে-বিদেশে পরিচিতি লাভ করে। যা পরবর্তীতে ১৯৬২ সনে বন্দর পুলিশ থানায় রূপান্তরিত হয়। কিন্তু বন্দর পুলিশ থানা অঞ্চলটি ১৯৮৩ সন পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ মহকুমার, নারায়ণগঞ্জ সদর প্রশাসনিক সার্কেলের অন্তর্ভূক্ত থাকে এবং এর একটি বিরাট অংশ ১৯৯৩ সন পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ শহরের অংশ হিসেবে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার অন্তর্ভূক্ত থাকে। প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের আওতায় ১৯৮৩ সনের ১লা আগষ্ট বন্দর উপজেলার সৃষ্টি হয়।

আরো পড়ুন: বাংলাদেশের ৬৪ জেলা উপজেলা সহ বিভিন্ন স্থানের নামের ইতিহাস

সোনারগাঁ উপজেলা নামকরণের ইতিহাস 

 ডঃ আর.সি. মজুমদার ও স্যার যদুনাথ সরকার যে সুবর্ণ ভূমির কথা বলেছেন তা এ সোনারগাঁ ভূমিকেই বুঝায়। যার মাটির বর্ণ সুবর্ণ বা রক্ত বর্ণ ছিল এবং যাকে সুবর্ণ ভুক্তি কিংবা সুবর্ণ বিষয় ও বলা হত। কালিকা পুরানে প্রাচীন ব্রহ্মপুত্র তীরের অনেক স্থানের ভূমি রক্তবর্ণ বলে উল্লেখ আছে। কথিত আছে যে, দেবা সুরের যুদ্ধকালে রক্তপাত হেতু মৃক্তিকা লোহিত বর্ণ ধারণ করেছিল। স্বর্ণ ভূমি থেকে সোনারগাঁ বা সুবর্ণ গ্রামের নাম করণ হতে পারে।  কারো কারো মতে, উপমহাদেশের একমাত্র ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (সোনারগাঁ) থেকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত প্রতিটি শিক্ষানবিস সেকালে স্বর্ণের টুকরো হিসাবে আখ্যায়িত হতেন এবং তাদের স্মরণে নামকরণ হয়েছিল সোনারগাঁ বা সুবর্ন গ্রাম। ডঃ নীহার রঞ্জন রায় তার বাঙ্গালার ইতিহাস গ্রন্থে বলেন, প্রাচীন নিম্নবংগে বা আশে পাশে কোন সোনার খনি ছিল। অথবা বুড়িগঙ্গার বা সুবর্ন গ্রামের পাশ্ববর্তী নদীগুলোতে সোনার গুড়ো ভেসে আসতো। এ স্বর্ণ প্রাপ্তির ফলে সুবর্ন গ্রাম বা সোনারগাঁ নামকরণ হতে পারে। কিংবদন্তী আছে যে, এখানে কোন এক সময় স্বর্ণের বৃষ্টি হয়েছিল এবং এর পর থেকে এ স্থানের নামকরণ হয়েছে সুবর্ন বা সোনারগাঁ। কথিত আছে, বাংলার বাঁর ভূঁইয়ার অন্যতম ঈশা খাঁর স্ত্রীর নাম ছিল সোনাবিবি। এই সোনাবিবি থেকেই সোনারগাঁর নাম করণ হয়েছে। সোনারগাঁ নামকরণের পেছনে উপরে উল্লিখিত তথ্যাবলীর কোনটি সত্য তা নিশ্চিত করে বলা যায় না।

ফতুল্লা নামকরণ ইতিহাস:

১৩৩৮ থেকে ১৩৫২ খৃস্টাব্দ পর্যন্ত সোনারগাঁ ফখরুদ্দিন মোবারক শাহ প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন রাজ্যের রাজধানীর মর্যাদা লাভ করে। বাংলার প্রথম স্বাধীন সুলতান ফখরুদ্দিন মোবারক শাহ। তিনি সোনারগাঁয়ের শাসনকর্তা বাহরাম খানের সাহায্যকারী ছিলেন। ১৩৩৮ খৃস্টাব্দে সুলতানের মৃত্যু ঘটলে দিল্লী হতে নতুন শাসনকর্তা নিয়োগে বিলম্ব হলে তিনি বিদ্রোহ ঘোষণা করে সোনার গাঁ অধিকার করেন। শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ সোনারগাঁ দখল করেন ১৩৫২ খৃস্টাব্দে। সেখান থেকে জারি করা হয় মুদ্রা। সুদুর বাগদাদ নগরী থেকে দিল্লী আধ্যাত্নিক সাধু সম্রাট শাহ ফতেহউল্লাহ্ ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে এখানে আসেন। পরবর্তীতে তাঁর মৃত্যুর পরে এখানেই কবরস্থ করা হয়। তার নাম থেকেই বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত সুফী সাধকের স্মৃতি বিজড়িত এক সময় পরগনা নামে পরিচিত এই এলাকার একটি অঞ্চল ফতেহউল্লাহ্ বা ফতুল্লা নামকরণ করা হয়।

নারায়নগঞ্জ জেলার  উপজেলা ও ইউনিয়ন এর নাম সমুহ:

আড়াইহাজার : সাতগ্রাম, দুপ্তারা, ব্রাক্ষন্দী,  ফতেপুর, বিশনন্দী, মাহমুদপুর, হাইজাদী,  উচিৎপুরা, কালাপাহাড়িয়া,  খাদকান্দা ইউনিয়ন।

বন্দর : মুছাপুর, মদনপুর. বন্দর, ধামগর, কলাগাছিয়া,

নারায়ণগঞ্জ:  ফতুল্লা, আলীরটেক, কাশিপুর, কুতুবপুর, গোগনগর, বক্তাবলী, এনায়েতনগর।

রূপগঞ্জ : মুড়াপাড়া, ভূলতা, গোলাকান্দাইল, দাউদপুর, রূপগঞ্জ, কায়েতপাড়া, ভোলাব।

সোনারগাঁ পিরোজপুর, শম্ভুপুরা, মোগরাপাড়া, বৈদ্যেরবাজার, বারদী, নোয়াগাঁও,  জামপুর,  সাদিপুর,  সনমান্দি,  কাঁচপুর।

তথ্যসুত্রঃ নারায়নগঞ্জ জেলা তথ্য বাতায়ন

About Sabuj Vumi Editor

Check Also

ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন স্থানের নামকরণ ইতিহাস

ঝিনাইদহ জেলার নামকরণ ইতিহাস: জনশ্রুতি আছে প্রাচীনকালে বর্তমান ঝিনাইদহের উত্তর পশ্চিম দিকে নবগঙ্গাঁ নদীর ধারে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Flag Counter