ফেনী জেলার বিভিন্ন স্থানের নামকরণ ইতিহাস

ফেনীর জেলার নামকরণ ইতিহাস :

ফেনী নদীর নামানুসারে এই অঞ্চলের নাম রাখা হয় ফেনী। মধ্যযুগে কবি-সাহিত্যিকদের কবিতা ও সাহিত্যে একটি নদীর স্রোতধারা ও ফেরিঘাট হিসেবে ফেনী শব্দ পাওয়া যায়। আদি শব্দ ‘ফনী’ মুসলমান কবি-সাহিত্যিকদের ভাষায় ‘ফেনী’তে পরিণত হয়েছে।

ছাগলনাইয়া উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:

সরকারী একটি ওয়েবসাইট সুত্রে পাওয়া যায়,  ধারণা করা হয় ইংরেজ শাসনামলে এ এলাকার নাম সাগরনাইয়া (সাগর যাকে নাইয়ে বা স্নান করিয়ে দেয়) থেকে ছাগলনাইয়া হয়ে যায়।

ডঃ আহমদ শরীফ চট্টগ্রামের ইতিকথায় বলেছেনঃ প্রাচীনকালে আধুনিক ফেনী অঞ্চল ছাড়া নোয়াখালীর বেশির ভাগ ছিল নিম্ন জলা ভূমি। তখন ভুলুয়া (নোয়াখালীর আদি নাম) ও জুগিদিয়া (ফেনী নদীর সাগর সঙ্গমে অবস্থিত) ছিল দ্বীপের মতো।  ছাগল নাইয়া নামকরণ সম্পর্কে কেউ কেউ বলেন যে ইংরেজ আমলের শুরুতে সাগর (Sagor) শব্দটি ভুল ক্রমে সাগল (Sagol) নামে লিপিবদ্ধ হয়েছিল।তাই ছাগল নাইয়া শব্দটি প্রচলিত হয়ে ওঠে। উল্লেখ্য ইংরেজ আমলের পূর্বে কোন পুথি পত্রে ছাগল নাইয়া নামের কোন স্থানের নাম পাওয়া যায় না।

উপজেলাটির নামকরণ নিয়েও শোনা যায় আরো একটি কল্পগল্প । গল্পটি   ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দ গান্ধীর ছাগল চুরির ঘটনা। অবিভক্ত ভারতের নোয়াখালী জুড়ে শুরু হয় ভয়ঙ্কর হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা। এই খবর মহাত্মা গান্ধীর কাছে পৌঁছালে দাঙ্গা নিরসনে তিনি তৎক্ষনাৎ নোয়াখালী আসার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৪৬ সালের ৭ নভেম্বর  এ তিনি নোয়াখালীর চৌমুহনী রেলস্টেশনে এসে পৌঁছেন। তিনি ছাগলের দুধ পান করতেন বলে সঙ্গে করে নিয়ে আসেন নিজের ছাগলটিও কিন্তু নোয়াখালীতে আসার পর আকস্মিকভাবে তাঁর ছাগল চুরি হয়ে যায়। মহাত্মা গান্ধীর এই ছাগল চুরির ঘটনা থেকেই ছাগলনাইয়া নামের উৎপত্তি বলে কেউ কেউ মনে করে থাকেন।

সোনাগাজী উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:

ধারণা করা হয়, ১৭৮০ খ্রিঃ থেকে ১৮০০ খ্রিঃ এর মাঝামাঝি  পলাশী যুদ্ধের পর নয়নগাজী নামে জনৈক ব্যক্তি ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য উপমহাদেশের পশ্চিম অংশ থেকে অত্র এলাকায় আগমন করেন। সোনাগাজী নামে তাঁর এক ছেলে ধনসম্পদের অধিকারী হয়ে এ এলাকায় প্রভাব বিস্তার করেন। সম্ভবত তাঁর নাম অনুসারে অত্র উপজেলার নাম সোনাগাজী নামকরণ করা হয়।
সোনাগাজী নামকরণের পিছনে আরো একটি কিংবদন্তি আছে, বাংলার বারো ভূঁইয়াদের বিখ্যাত জমিদার ছিলেন ফজলগাজী, ফজলগাজীর পুত্র বাহাদুর গাজী, বাহাদুর গাজীর পুত্র সোনাগাজী। তিনি প্রচুর ধনসম্পদের অধিকারী অত্যন্ত প্রতাপশালী ছিলেন, যার নামানুসারে এ অঞ্চলের নামকরণ করা হয় সোনাগাজী।

ফুলগাজী উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:

কথিত আছে অত্র এলাকার জনৈক ফুলগাজী মজুমদার নামীয় একজন গুনী ব্যাক্তির নামে ফুলগাজী নামক স্থানের নামের প্রেক্ষিতে ফুলগাজী উপজেলা নামকরণ করা হয়।

আরো জানুন:      বাংলাদেশের ৬৪ জেলা উপজেলা সহ বিভিন্ন স্থানের নামের ইতিহাস

পরশুরাম উপজেলা নামকরণ ইতিহাস:

এই উপজেলার বাউরপাথর গ্রামে পরশুরাম চৌধুরী নামে এক হিন্দু বিত্তবান ব্যক্তি ছিলেন। তাহার নামানুসারে এই উপজেলার নাম পরশুরাম উপজেলা নামকরণ করা হয়।

পরশুরাম নামকরণের পেছনে অত্রাঞ্চলে কয়েকটি জনশ্রুতি পাওয়া যায়। কারো কারো মতে হিন্দুদের অবতার পরশুরামের নামে এ নামকরণ হয়েছে।

দাগনভূঞা উপজেলার নামকরণ ইতিহাস

দাগনভূঞা উপজেলার পূর্ব নাম গোপীগঞ্জ/গুপিগঞ্জ। ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রখ্যাত জমিদার শ্রী অরুণ সিং বাহাদুরের স্ত্রীর নাম ছিল শ্রী গোপীদেবী যিনি স্বামীর জমিদারীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সে থেকে তার নাম অনুসারে জমিদারী স্টেট গোপীগঞ্জ নামে পরিচিতি লাভ করে। পরবর্তীতে মুঘল সম্রাট শাহাজাহানের পুত্র শাহাজাদা সুজার আমলে বারভূঁঞাদের কোন এক উপবংশের মাতুভূঁঞা ও দাগনভূঁঞা নামে দু’জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ঐ সময় ফেনীর পশ্চিমাঞ্চলে বসতি পত্তন করে ছিলেন। মাতুভূঁঞা ও দাগনভূঁঞা এই দুই ব্যক্তির একজন মাতুভূঁঞা বর্তমানে ভূঁঞা বাড়িতে এবং অপরজন দাগনভূঁঞা দিঘীর আশে পার্শ্বে স্থায়ী বসতি স্থাপন করেন বলেন ধারনা করা হয়। যার নাম অনুসারে এলাকাটি দাগনভূঁঞা হিসেবে খ্যাতি পায়।

তথ্যসুত্র:

 

About Sabuj Vumi Editor

Check Also

ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন স্থানের নামকরণ ইতিহাস

ঝিনাইদহ জেলার নামকরণ ইতিহাস: জনশ্রুতি আছে প্রাচীনকালে বর্তমান ঝিনাইদহের উত্তর পশ্চিম দিকে নবগঙ্গাঁ নদীর ধারে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *