নরসিংদী জেলার নামকরণ ইতিহাস:
রাজা ধনপদ সিংহের একপুত্র নরসিংহের নামনাম থেকে নরসিংদী নামের উৎপত্তি। নরসিংদী শব্দটির আসল রূপ হলো নরসিংহদী। ধারণা করা হয়, পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে প্রাচীন ব্রহ্মপুত্র নদের পশ্চিম তীরে রাজা নরসিংহ নরসিংহপুর নামে একটি ছোট নগর স্থাপন করেছিলেন। নরসিংদী নামটি রাজা নরসিংহের নাম অনুসারে উৎপত্তি হয়েছে বলে মনে করেন ইতিহাসবিদরা। এক সময়ে নরসিংদী অঞ্চলটি মহেশ্বরদী পরগনার অর্ন্তভূক্ত ছিল। এ পরগনার জমিদার ছিলেন দেওয়ান ঈশা খাঁ। তারপরে জমিদার ছিলেন তার উত্তরসূরি হয়বতনগর দেওয়ান সাহেব বাড়ির জমিদারগণ। জমিদারী প্রথা বিলুপ্তির সময় জমিদার ছিলেন দেওয়ান শরীফ খা, আয়শা আক্তার খাতুন,ফরকুন্দা আক্তার খাতুন ও সৈয়দ আবদুল্লাহ। জমিদারী প্রথা বিলুপ্তির পর একসময় নরসিংদী ছিল প্রশাসনিকভাবে ঢাকা জেলাধীন নারায়ণগঞ্জ মহকুমার একটি থানা।
নরসিংদী জেলার উপজেলার নাম সমুহ: নরসিংদী সদর, পলাশ, শিবপুর. বেলাব, মনোহরদী, রায়পুরা।
পলাশ উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:
প্রচলিত বিশ্বাস থেকে জানা যায়, অতীতে বর্তমান সদর এলাকায় প্রচুর গাছ ছিল। পলাশ ফুলের মৌসুমে এই এলাকা ফুলে ফুলে লাল হয়ে থাকতো।এর পরিপ্রেক্ষেতে মৌজার নাম হয় পলাশ এবং পরবর্তীতে এখানে থানা সদর দপ্তর স্থাপন করা হলে থানার নামকরন হয় পলাশ।
শিবপুর উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:
এ এলাকায় খড়গ রাজাদের শাসন আমল ছিল ৬০০-৭০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। খড়গ রাজাদের ৫ জন রাজা ছিলেন। তাদের নাম: (১) রাজা খড়োগাদ্যাম, (২) মহারাজা জাতখড়গ, (৩) মহারাজা দেব খড়গ, (৪) রাজা রাজভ্রট্ট ও (৫) রাজা বলভ্রট্ট। এ বংশের প্রথম তিন রাজা ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এবং পরবর্তী দুই রাজা ছিলেন শৈব হিন্দু। এই শৈব শব্দ থেকে শিব শব্দের উৎপত্তি এবং তা থেকে জায়গাটির নাম শিবপুর নামকরণ করা হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। আবার পূর্বে এলাকাটি হিন্দু দেবতা শিব পুজার কেন্দ্রবিন্দু ছিল। তাই ধারণা করা হয় হিন্দু দেবতা শিব এর নামানুসারে জায়গাটির নাম শিবপুর নামকরণ করা হয়েছে।
আরো জানুন: বাংলাদেশের ৬৪ জেলা উপজেলা সহ বিভিন্ন স্থানের নামের ইতিহাস
বেলাব উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:
১৯৮৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর বেলাব থানা হিসাবে আত্মপ্রকাশ ঘটে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, এককালে এখানে প্রচুর পরিমাণে ফলফলাদি জন্মাত। এসব ফলের মধ্যে সুমিষ্ট ও ঔষধি ফল হিসাবে বেল অতি সুপরিচিত বলে বেলের নাম অনুসারে এ উপজেলার নামকরণ করা হয়েছে বেলাব। ১৯৮৩ সালে মনোহরদী ও রায়পুরা উপজেলার কিছু ইউনিয়ন ভেঙে বেলাব নামে একটি আলাদা থানা গঠন করা হয়।
মনোহরদী উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:
স্থানীয় লোকজন থেকে জানা যায়,সুদূর অতীতে বর্তমান এলাকা দেখতে অনেকটা দ্বীপ সদৃশ ছিল এবং এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছিল মনোরম।এজন্য লোকজন এই জায়গায়গাকে বলতো মনোহর দ্বীপ। এই মনোহর দ্বীপ লোকমুখে প্রচারিত হতে হতে এক সময় তা মনোহরদী রূপলাভ করে।
রায়পুরা উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:
কথিত আছে যে, ব্রিটিশ শাসন আমলে লর্ড কর্নওয়ালিশের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা চালু হওয়ার সময় এ অঞ্চল ময়মনসিংহ মুক্তাগাছা জমিদারের আওতায় আসে। উক্ত জমিদারের কাছ থেকে সিকিমি পত্তন নেন এখানকার রায় উপাধিধারী কিছুসংখ্যক অমাত্য। এদের উল্লেখ্যযোগ্য হলো প্রকাশচন্দ্র রায়, পূর্ণচন্দ্র রায়, মহিমচন্দ্র রায়, ঈশ্বরচন্দ্র রায় এবং আরও অনেকে। এদের নামানুসারে প্রথমে এলাকার নাম হয় “রায়নন্দলালপুর”। পর্যায়ক্রমে এই নাম থেকে রায়পুরা নামের উৎপত্তি হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, পূর্বে এই এলাকা “কালীদহসাগরেরচর” নামে পরিচিত ছিল। পাকিস্তান আমলের প্রথম দিকেও এ অঞ্চল ময়মনসিংহ কালেকটরেটের আওতাভুক্ত ছিল।
তথ্যসুত্র: নরসিংদি জেলা তথ্য বাতায়ন।