পাবনা জেলা নামকরণ ইতিহাস:
পাবনা জেলার নামকরণ কিভাবে হয়?
- এক কিংবদন্তি মতে গঙ্গার ‘পাবনী’ নামক পূর্বগামিনী ধারা হতে পাবনা নামের উৎপত্তি হয়েছে।
- ‘পাবন’ বা ‘পাবনা’ নামের একজন দস্যুর আড্ডাস্থলই এক সময় পাবনা নামে পরিচিতি লাভ করে।
- খ্রিষ্টীয় একাদশ শতকে পাল নৃপতি রামপালের শাসনকালে। ইতিহাসে উল্লেখ আছে, রামপাল হ্নতরাজ্য বরেন্দ্র কৈবর্ত শাসকদের নিকট থেকে পুনরুদ্ধারের জন্য যে চৌদ্দজন সাহায্যকারীর শরণাপন্ন হয়েছিলেন -এঁদেরই একজন ছিলেন পদুম্বার সোম নামক জনৈক সামন্ত। কয়েকজন ঐতিহাসিক মনে করেন, পদুম্বা হতে ‘পাবনা’ নাম এসেছে। কালক্রমে পদুম্বাই স্বরসঙ্গতি রক্ষা করতে গিয়ে বা শব্দগত অন্য ব্যুৎপত্তি হয়ে পাবনা হয়েছে।
- আবার অনেকের মতে পৌন্ড্রবর্ধন হতে পাবনা নামের উৎপত্তি হয়েছে। তাঁরা বলেন পৌন্ড্রবর্ধনের বহু জনপদ গঙ্গার উত্তর দিকে অবস্থিত ছিল। চলতি ভাষায় পুন্ড্রুবর্ধন বা পৌন্ড্রবর্ধন পোনবর্ধন বা পোবাবর্ধন রূপে উচ্চারিত হতে হতে পাবনা হয়েছে।সূত্র: পাবনা জেলার তথ্য বাতায়ন
আটঘরিয়া উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:
আটঘরিয়া নামের পেছনে রয়েছে জনশ্রুতি, কিংবদন্তি ও ইতিহাসের নানা ঘটনাপ্রবাহ। ইতিহাস পাঠে জানা যায়, অতি প্রাচীন কালে মহাভারতের পান্ডব ভ্রাতাগণের রাজত্ব ছিল এ-অঞ্চল। সেকালে পাবনা জেলার উত্তরের বৃহৎ চলন বিল, যা চাটমোহরের দক্ষিণ সীমানা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। পশ্চিমে ও দক্ষিণে গঙ্গা বা পদ্মা নদী এবং পূর্ব দিকে যমুনা নদী প্রবাহিত ছিল। তখন পাবনার অধিকাংশ অঞ্চল ছিল জলমগ্ন। ভূ-প্রকৃতির গঠন অনুসারে তখন পাবনার মূল ভূখন্ডের যে-অস্তিত্ব ছিল, তা ছিল মূলত ঈশ্বরদীর কিছু অংশ এবং পুরো আটঘরিয়া গ্রাম, যা পদ্মার শাখা চন্দ্রাবতীর পূর্বতীরে অবস্থিত ছিল। জনশ্রতি রয়েছে সর্বপ্রথম এখানে আট ব্যক্তি মিলে আটটি ঘর তুলে একটি পাড়ায় বসতি গড়ে তোলে। ক্রমে আট ঘর বসতি থেকে আটঘরিয়া নামের উৎপত্তি হয়েছে।
আরেকটি তথ্য থেকে জানা যায়, ভারতসম্রাট চন্দ্রগুপ্তের রাজত্বকালে (খ্রিস্টপূর্ব ৩২৪-৩০০ অব্দে) ‘‘বঙ্গবিভাগ’’ নামে যে-এলাকা ছিল, পাবনা ছিল তার অন্তর্ভুক্ত। ঐ সময় এ-অঞ্চলে ‘‘পোদ জাতির’’ আট ঘর মানুষ এখানে বসতি স্থাপন করে। ফলে এলাকাটির নামকরণ হয় আটঘরিয়া।
কেউ কেউ বলেন, ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে সিপাহী বিদ্রোহের সময় বিদ্রোহের অপরাধে আটজন সিপাহীকে নদী-অরণ্য-বেষ্টিত, সাপ-মশা-মাছির অভয়ারণ্য, এই এলাকার জঙ্গলে নির্বাসন দেওয়া হয়। নির্বাসিত সেই সিপাহীরা বুদ্ধি খাটিয়ে এ অঞ্চলে নিজেদের বসতের উপযোগী করে তোলে। নির্বাসিত সিপাহীরা প্রথমে আটটি ঘর বা বসতবাড়ি তৈরি করে এ-এলাকায় বসবাস শুরু করায় স্থানটির নাম হয় আটঘরে বা আটঘরিয়া।
সূত্র : জেলা তথ্য বাতায়ন
ঈশ্বরদী উপজেলা নামকরণ ইতিহাস:
বর্তমানে ঈশ্বরদীর পূর্বে ১৯০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সাঁড়া থানা নামে। পরবর্তীতে ১৯২৯ সালে ১০ মে সাঁড়া থেকে থানা স্থানান্তরিত হয় ঈশ্বরদীর টেংরী মৌজায় ঈশ্বরদী থানা নামকরণ হয়।
পূর্বে পদ্মার পলি বিধৌত ঈশ্বরদী অঞ্চলের গভীর অরণ্যে কিছু কিছু লোক বাস করতো। তাদের উপর কাপালিক তান্ত্রিরা নৌপথে আক্রমণ করে সম্পত্তি লুট করতো। ঈশা খাঁ কাপালিক তান্ত্রিদের বিতাড়িত করে তাবু গাড়ে। কিছুদিন এলাকাতে থাকলে পদ্মার পাড়ে বর্তমান মাজাদিয়ার ইসলাম পাড়াতে তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ স্থাপন করেন এবং মসজিদটি গত ৫ বছর আগে পদ্মায় ভেঙে গেছে এবং পানি সমস্যার জন্য বর্তমানে ঈশ্বরদী এয়ারপোর্ট রোডে গোকূল নগরে একটি ডিহি খনন করেন। এরই নামানুসারে এলাকার নামকরণ হয় ঈশ্বরদী।
আরো জানুন: বাংলাদেশের ৬৪ জেলা উপজেলা সহ বিভিন্ন স্থানের নামের ইতিহাস
চাটমোহর উপজেলা নামকরণ ইতিহাস:
যে, খ্রীষ্টিয় পঞ্চদশ শতাব্দীতে এখানে সোনার মোহর ক্রয়-বিক্রয় হতো বলে কথিত আছে । তখন ডাকাতদের উপদ্রব বেশী থাকায় বিক্রেতারা ডাকাতদের কবল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য চটের থলিতে সোনার মহর নিয়ে এসে বিক্রি করতো। সোনার মোহর চটের থলিতে ভরে নিয়ে এসে বেচা-কেনা হতো বলে এখানকার নামকরণ করা হয়েছে চাটমোহর। সুত্র: ফেসবুক।
ফরিদপুর উপজেলা নামকরণ ইতিহাস:
ধারণা করা হয় যে, বহু বছর আগে সুফি সাধক শেখ শাহ ফরিদ (র:) এ অঞ্চলে ভ্রমণে আসেন পরবতীতে এ উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে বসবাস করেন। প্রচলিত বিশ্বাস, সুফি সাধক শেখ শাহ ফরিদ (র:) এঁর নামানুসারে এ উপজেলার নামকরণ করা হয়েছে ‘‘ফরিদপুর’’। এখানে তাঁর মাজার রয়েছে। সূত্র : উপজেলা তথ্য বাতায়ন
বেড়া উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:
মোঘল আমলে এই এলাকায় একটি পোতাশ্রয় স্থাপন করা হয়। ফারসি ভাষায় পোতাশ্রয়কে বলা হয় বেহরা। আবার আরবি ভাষায় ’বেড়হা’ শব্দের অর্থ সুন্দর। মনে করা হয় ফারসি বেহরা বা আরবি বেড়হা শব্দের পরিবর্তিত রূপ থেকে বর্তমান বেড়া নামকরণ হয়েছে।
ভাঙ্গুড়া উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:
ইতিহাস; ১: “ভাঙ্গুড়া” নামটি নিয়ে কিংবদন্তি প্রচলিত আছে। অনেকে বলেন, বড়াল এবং গুমানী নদীর ভাঙ্গন কবলিত এলাকা হওয়ায় এর প্রাচীন নাম ছিল ভাংগুরিয়া। ভাংগুরিয়া থেকে ভাংগুড়া নামের উদ্ভব হয়। বর্তমানে গুমানী ও বড়ালের সংযোগকারী একটি খালের স্রোতরেখা বিদ্যমান আছে। যার ফলে এই জনশ্রুতির পক্ষে প্রমাণ পাওয়া যায়।
ইতিহাস; ২: অনেকে বলে থাকেন নেশা জাতীয় ভাং গাছের গুঁড়া এখানে প্রচুর পরিমাণ পাওয়া যেত সেজন্য এর নাম ভাঙ্গুড়া হয়। এমতের পক্ষে তেমন জোড়ালো প্রমাণ পাওয়া যায় না। ভাঙ্গুড়া মৌজার নামানুসারে ভাঙ্গুড়া উপজেলার নাম করণ করা হয়েছে।
সাথিয়া উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:
অতি প্রাচীনকালে সাঁথিয়া থানা সদর ও এর আশপাশের এলাকা জঙ্গল ছিল। হিংশ্র জন্তুর ভয়ে নৌকায় বা গরুর গাড়িতে চড়েও এখানে যাতায়াত করা কারও পক্ষে সম্ভব ছিলনা। মানুষ তখন সঙ্গী বা সাথী ছাড়া চলতে বা বাইরে বের হতে পারতনা। সেকালে ‘ সাথি নিয়া‘ বা ‘সাথি আয়’ বলে সঙ্গীকে নিয়ে এই স্থান দিয়ে পারাপার বা চলাচল করতে হতো। সাথি ছাড়া বের না হইতে পারার কারনেই এই এলাকার নাম সাঁথিয়া করা হয় মর্মে জনশ্রুতি রয়েছে।
সুজানগর উপজেলার নামকরণ ইতিহাস:
সুজানগরের আদি নাম গোবিন্দগঞ্জ। মুগল সম্রাট শাহ্জাহানের রাজত্বকালের শেষভাগে তার পুত্রদের মধ্যে রাজ সিংহাসনের দখল নিয়ে যে বিরোধের সুত্রপাত হয় তার ধারাবাহিকতায় যুবরাজ শাহ সুজা আরাকানে পালিয়ে যান। তিনি আরাকান গমনকালে সুজানগরে ৩ রাত অবস্থান করেন। যুবরাজ শাহ সুজার এই অবস্থানকে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য এ অঞ্চলের মানুষ এ জনপদের নামকরণ করেন সুজানগর।